দাঁতের যত্নে ৬টি টিপস

315
0

সুস্থ দাঁতে সুন্দর হাসি। হাসতে কে না ভালোবাসে, মন ভালো রাখার জন্য হাসির বিকল্প নেই। আর এই হাসিকে সুন্দর রাখতে দাঁতের যত্নের বিকল্প নেই। তাই সুন্দর হাসিটাকে হারিয়ে ফেলতে যেন না হয়, তাই আগে থেকেই দাঁতের যত্নে সচেষ্ট হওয়া উচিত।

এছাড়াও, দাঁতের চিকিৎসা দিন দিন যেভাবে ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে তা বহন করাও কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই দাঁত থাকাকালীন অবস্থাতেই দাঁতের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। দাঁত সুস্থ রাখতে কীভাবে তার যত্ন নেয়া যায় তাই নিয়েই আজকের আলোচনা।  

দৈনিক ২ বেলা দাঁত ব্রাশ

দাঁত সুস্থ এবং পরিষ্কার রাখতে দিনে দুইবার দাঁত ব্রাশ করা জরুরী। সকালে নাস্তার পরে এবং রাতে খাবার শেষে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁত পরিষ্কার এবং সুস্থ থাকে। দিনে দুইবার ব্রাশ করার কথা কমবেশি সবাই জেনে থাকলেও এই জিনিসটাকে গুরুত্ব দেইয় না অনেকেই। আর এভাবেই শুধুমাত্র দিনের শুরুতে ব্রাশ করলেই দাঁত পরিষ্কার থাকবে এই ধারণা নিয়ে দাঁতের অযত্ন করে যাচ্ছে সবাই প্রতিনিয়ত।  

 

সকালে নাস্তার পরে এবং রাতে খাবার শেষে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। Image Source: hindustantimes.com

দিনের শুরু এবং রাতের শেষ-এই দুই সময়ে দাঁত ব্রাশ করতে হয়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে ব্রাশ করলে সারাদিন দাঁতে জমতে থাকা জীবাণু থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আবার দিনের বেলা ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ না করে নাস্তা শেষে ব্রাশ করা উচিত। 

যেহেতু রাতে খাবার শেষে একবার ব্রাশ করার ফলে দাঁতে জমে থাকা খাদ্যকণা চলে যায়। তাই দিনে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করলে তখন দাঁতের উপকারের চেয়ে ক্ষয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়। এজন্য সকালে নাস্তা শেষে ব্রাশ করতে হয়। 

সঠিকভাবে ব্রাশ করা 

দৈনিক ২ বার দাঁত ব্রাশ করার কথা কমবেশি সবাই জানলেও সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশের নিয়ম সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে। দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের মতো যথাযথভাবে দাঁত ব্রাশ করাটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সঠিকভাবে ব্রাশ না করা অনেকটা ব্রাশ না করার সমতূল্য। 

সময় নিয়ে আস্তে ধীরে দাঁত ব্রাশ করতে হয়। অন্তত দুই মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। প্রতিটা দাঁত আলাদা করে ব্রাশ করতে হয় যেন প্রতিটা দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা জীবাণু বের হয়ে আসতে পারে। ব্রাশ করার সময় আমরা মুখগহ্বরকে চার ভাগে ভাগ করে নিতে পারি – উপরে ডান ভাগ, উপরের বাম বাগ, নিচের ডান ভাগ এবং নিচের বাম ভাগ। এভাবে চার ভাগে বিভক্ত করে প্রতি ভাগের জন্য ৩০ সেকেন্ড সময় ধরে ব্রাশ করতে হবে। 

চিত্রে দেখা যাচ্ছে ব্রাশ করার নিয়মাবলী। Image Source: alexandiasmiles.com

অনেক ক্ষেত্রে, ইলেকট্রিক টুথব্রাশ যথাযথভাবে ব্রাশ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। সাধারণ টুথব্রাশের সাহায্যেও সঠিকভাবে ব্রাশ করা সম্ভব অবশ্যই। 

তবে টুথব্রাশ ৩ থেকে ৬ মাস অন্তর অন্তর পরিবর্তন করা প্রয়োজন। দীর্ঘদিন একই ব্রাশ ব্যবহারের ফলে তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায় এবং ঠিকমতো দাঁতে জমে থাকা জীবাণু, খাদ্য বের করে আনতে পারে না। 

ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার 

আমাদের ব্রাশ দাঁতের সকল ফাঁকে গিয়ে জমে থাকা খাদ্যকণা বের করে নিয়ে আসতে পারে না। আর এই জমে থাকা খাদ্যকণা পরবর্তীতে দাঁতের ক্ষয় ঘটায় এবং ব্যথার সঞ্চার ঘটায়। ডেন্টাল ফ্লসের সাহায্যে সহজেই এসকল খাদ্যকণা দাঁতের ফাঁক থেকে বের করে আনা সম্ভব। 

অনেকে টুথপিকের সাহায্যে এই খাদ্যকণা বের করে থাকেন, এতে করে অনেক সময় খোচা লেগে মাড়ির ক্ষতি হতে পারে। টুথপিক বযবহার না করে তাই ডেন্টাল ফ্লস বা সুতা ব্যবহার করে দাঁতের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। এছাড়াও, দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা এসব খাদ্যকণা থেকে মুখে গন্ধেরও সৃষ্টি হয়, যা আমাদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতে ফেলে দেয়। 

ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহারের নিয়মাবলী। Image Source: magnoliadental.com

রাতে দাঁত ব্রাশ করার পূর্বে ফ্লস ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেকেই ফ্লস ব্যবহার এড়িয়ে যান এবং ফ্লস ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু এটা স্বাস্থ্যকর রুটিনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 

ফ্লস ব্যবহার শুরুর প্রথমদিকে এটি সংবেদনশীল মাড়ির ব্যথার কারণ পারে। এটা সাধারণ একটা বিষয় এবং কয়েকদিন ব্যবহারের পর আর ব্যথা থাকবে না। ফ্লস ব্যবহার করার সময় এটিকে পুরো দাঁত বরাবর উপর নিচে স্লাইড করতে হয়। 

দাঁতের আঁটসাঁট জায়গাগুলো উপেক্ষা করা যাবে না, কেননা এসকল স্থানে টুথব্রাশ পৌঁছাতে পারে না। তাই ফ্লস ব্যবহার করেই এসকল স্থানের কণা বের করে আনতে হবে। দৈনিক ১ বার ফ্লস ব্যবহার করতে হবে। 

মাউথওয়াশের ব্যবহার

দুরগন্ধমুক্ত, পরিষ্কার এবং সতেজ নিঃশ্বাস নিশ্চিত করতে মাউথওয়াশের ভূমিকা রয়েছে। এটি দাঁতের প্লাক তৈরি হওয়া রোধ করতে পারে, মুখের ব্যাকটেরিয়া কমাতে সাহায্য করে, এনামেলকে শক্তিশালী করতে পারে এবং দাঁতের ক্ষয়রোধ করতে পারে। মাউথওয়াশে যদি ফ্লোরাইড থাকে তবে এটি দাঁতের ক্যাভিটি কমাতে ভূমিকা রাখে। 

বাজারে নানান রকমের মাউথওয়াশের প্রচলন আছে। Image Source: oral-b.com

সতেজ নিঃশ্বাসে মাউথওয়াশের জুরি নেই। ব্রাশ করার পরে এবং ফ্লস ব্যবহারের পরে দাঁতের যে এরিয়া পরিষ্কার করা থেকে বাদ পড়ে যায়, সেসব এরিয়া পরিষ্কার রাখতে এটি ব্যবহার করা হয়।

চিনিজাতীয় খাবারে সাবধানতা এবং ধূমপান পরিহার 

চিনিজাতীয় সকল খাদ্য দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। চিনি এসিডীয় এবং এই চিনির ফলে মুখের অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া এসিডে পরিণত হয়ে যায়। তাই চিনিজাতীয় খাবার খাওয়ার পরে মুখ পানি দিয়ে তা ভালোভাবে কুলি করতে হবে যেন চিনির কণা দাঁতে লেগে না থাকে।  

ধূমপান মাড়ির রোগ এবং মুখের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। এ ধরনের জিনিস তাই এড়িয়ে চললে দাঁতের ক্ষয় রোধ সম্ভব আবার ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমানো সম্ভব। 

দাঁতের যত্নে ধূমপান পরিহার করতে হবে। Image Source: yorkplacedental.com

নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া 

প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত। ডেন্টিস্ট দাঁত ক্ষয়, দাঁতের ক্যাভিটি, মাড়ির রোগ, মুখের ক্যান্সার ইত্যাদি নানান বিষয় পর্যবেক্ষণ করে দিবেন। সাধারণ হিসাব ৬ মাস ধরা হলেও ডেন্টিস্টকে জিজ্ঞেস করে কতদিন পরপর আসতে হবে তা জেনে নেয়া যেতে পারে। 

 

 

Feature Image: globalbrandmagazine.com 
References: 

01. 11 Ways to Keep Your Teeth Healthy. 
02. 7 Tips for Healthy Teeth and Gums. 
03. What to do for healthy teeth and gums04. 5 Oral Hygiene Tips from General Dentists05. Oral Hygiene06. 10 Tips for Healthy Teeth & Gums.