ছোট ভাইয়ের প্রেম

4925
0

সারাদিন ভার্সিটিতে ক্লাস করে এমনিতেও মাথা ঠিক নেই। তার মধ্যে বাসায় ঢুকে দেখি ছোট ভাই পড়ার টেবিলে বসে ফোন ইউস করছে। আর কিছুদিন পর ওর ফাইনাল পরীক্ষা; আর হারামজাদা এখন এগুলা করতেছে দেখে মাথা গরম হয়ে গেল। চুপিচুপি টেবিলের সামনে গিয়ে ফট করে মোবাইলটা নিয়ে নিলাম। স্ক্রিনের উপর যা ছিল তা দেখার পর মনে হলো আমার চোখ গুলা নিজের জায়গা থেকে দুই ইঞ্চি উপরে উঠে গেছে।

দেখি- বিশ মিনিট পর্যন্ত কল চলতেছে। নাম ভেসে আছে Jaantush।  কথার সাউন্ড শুনা যাচ্ছে।  তাই মোবাইলটা হাত থেকে কানের মধ্যে নিলাম।

েয়েটা বলেই যাচ্ছে:-
– বাবু আজ সারারাত কথা বলবে কেমন? আজ আম্মু বাসায় নেই।
– ফেসবুকে আসলে সেখানেও চ্যাট করতে পারবো।
– কথা বলছোনা কেনো বাবু? রবিটা এখন খুলে ফেলবো। এয়ারটেল সিম দুটো ওপেন থাকবে। কল দিলে এগুলোতে দিও।
– বাবু কি হইছে কথা বলো? নাকি আবারো অফিসে কাজের চাপ বেড়ে গেছে? বাবুউউউউ….

টিট টিট টিট। কল কেটে দিয়েছি। রাগে আমার সারা শরীর গিরগির করে কাঁপছে। ওর বয়সে আমি কখনো কোনো মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলা তো দুরের কথা সামনে দেখলে পর্যন্ত মাথা নিচু করে হাটতাম। আর এই মেয়ে দেখি সিমের গোডাউন নিয়ে বসে আছে। এই মেয়ের সাথে প্রেম করার চেয়ে টার্কি মুরগি পালা ভালো।
কানের উপরে কষে একটা দিয়ে বললাম – ‘হারামজাদা এই বয়সে প্রেমিকা জুটাইছস? এখনো ক্লাস টেন পাশ করতে পারস নাই আর লাকা মারলি তুই অফিসে; কাজের চাপ! তোর মতো থাকতে মিথ্যা কি জিনিস মুখে দিয়ে বের হত না। এই চালাকি কই শিখলি এখুনি বল নাইলে কিন্তু মাথা থেকে পা পর্যন্ত এমন ধোলায় দিমু যেনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারস।’

চুপ হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তাই আর বেশি থাপ্পড় থেরাপি দিলে অবিচার করা হবে। মোবাইলের ম্যাসেজ অপশন চ্যাক করতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়েই যাচ্ছিলাম ভাগ্যিস কিছুক্ষন আগে দুইটা নাপা আর গ্যাস্টিকের ঔষধ খাওয়াতে এখনো সুস্থ আছি। ম্যাসেজ বক্সে জান; বাবু; টিয়া; সোনা; ময়না; কাঁদেনা সহ ডজন খানেক নাম্বারের ম্যাসেজ। আজ পর্যন্ত একটা মেয়ের পেছনে দুই বছর পর্যন্ত ঘুরেও তাকে পটাতে পারলাম না আর আমার অর্ধেক বয়সের ছোট ভাইটা কিনা প্রেমের উস্তাদ। ডজন খানেক শিস্য।

মোবাইল নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে দোকানে চলে আসলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম- কি যুগ আসলো? এই বয়সটা হচ্ছে মুখে ললিপপ দিয়ে সারারাত পড়ার বয়স। সব দোষ এই মোবাইলের। মোবাইল আর হাতে দেওয়া যাবেনা।

রাগের মাথায় আমার ফোন বাসায় রেখেই চলে এসেছি। তাই কিছুক্ষন বসে বাসায় চলে এলাম। রুমে ঢুকে দেখি ছোট ভাই নাই। সারাঘর খুঁজেও পেলাম না। অবশেষে জানালার পাশে ছোট ভাইয়ের হালকা কথার শব্দ পেলাম। মনে হচ্ছে কারো সাথে কথা বলছে; জানালায় কান দিয়ে শুনতে লাগলাম।
বলছে-‘ জানো আজ ভাইয়া আমার মোবাইল নিয়ে নিছে। এটা ভাইয়ার নাম্বার। আমার ফোনে আর কল করিও না। ফোন ভাইয়ার কাছে। আর এটাতেও কল দিও না। সময় পেলে আমিই কল দিবো। ভাইয়া আসার সময় হয়ে গেছে তোমার সাথে পরে কথা বলব কেমন?’

এভাবে একি কথা কয়েকবার শুনলাম। নিশ্চয় এই সুযোগে সবগুলোরে এলার্ট করে দিচ্ছে। ছোট ভাইয়ের কান্ড দেখে বুকের ভেতর একটা গান বেজে উঠেছে –

‘ও ভাইয়া ও ভাইয়া রে তুই অপরাধী রে
আমার রিচার্জ করা ফোনের টাকা দে ফিরায়া দে
আমার মোবাইল নিয়ে কথা বলার অধিকার দিল কে
ছোট ভাই তুই বড় আপরাধী তোর ক্ষমা নাই রে…’

দরজা আটকানোর মোটা লাঠিটা খুঁজে নিলাম। দাঁতে দাঁত কামড়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। হারামজাদা আজ কথা শেষ করে বাসায় আসুক; হাতের লাঠিটা ভাঙা পর্যন্ত লাঠিচার্জ বন্ধ হবেনা। এই রোগ থেকে বাঁচানোর পারফেক্ট ট্রিটমেন্ট এটাই!!

লেখাঃ Mohammad Ismail