নব্বই দশক: যে দশক ভোলার নয় (১ম পর্ব)

1730
5

একটি দশক কেবল বৃত্তের আবরণে এক সময়কাল নয়! এটি এক অনুভূতির মোড়কে আবেগের নাম! সেই আবেগ অক্ষরের প্রলেপে নাম পেয়েছে নব্বই দশক নামে। এই সময়টিতে যারাই জন্মেছে বা এই সময়কালের স্পর্শ পেয়েছে তারা যেমন চিঠি লিখেছে, ঠিক তেমনই মনের কথা পাঠাতে আবার ভিডিও কলেও কথা বলেছে। চিঠির অপেক্ষা আর বিরহের স্বাদ যেমন তারা পেয়েছে, তেমনই পেয়েছে কয়েক সেকেন্ডে প্রিয়জনদের দেখার সুখ।

যে দশক চোখের পলকে মিটিয়েছে যোজন যোজন দূরত্ব। অপেক্ষা মানুষের সকল আবেগকে দৃঢ় করে। আর অপেক্ষার মাইলের পর মাইলের দূরত্ব ঘুচতে দেখেছি আমরা আরাধ্য এই দশকে।

গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বায়নের ক্রমাগত স্রোতে এমন অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে। আজকের এই উপাখ্যান বহু আরাধ্য ফেলে আসা সেই দশকের। যেখানে স্মৃতি এখনো ঘুরে বেড়ায় আরব্যোপন্যাসের জাদুর ছোঁয়াতে।

১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ এই পুরো দশক ছিল এমন একটি দশক, যেখানে উড়ন্ত গোলার মতো বর্ষে ছিল পপ সংস্কৃতি! ভরে ছিল বন্ধুত্বের বন্ধনে। কি ছিল না এই দশকে? এখানে জন্ম হয়েছিল ড্যান্সভিত্তিক মুভি থেকে শুরু করে ফাস্ট-ফুড কালচার।

এক ঝলকে নব্বইয়ের আবহ। Image from EtsUK

এই দশক সাক্ষাৎ পেয়েছিল বহুল আলোচিত আইকনিক শো যেমন- রুগর‍্যাটস (Rugrats-1991), ডৌগ (Doug-1991), হেই অ্যারনল্ড (Hey Arnold-1996) এবং রকেট পাওয়ার (Rocket Power-1999); যা এখনো প্রজন্মের ভেতরে উম্মাদনার সৃষ্টি করে।  

১৯৯৩ সালে ‘অল-নিউ মিকি মাউস’ ক্লাব যাত্রা শুরু করে তাদের ষষ্ঠ মৌসুমের ব্রিটনি স্পিয়ার্স, জাস্টিন টিম্বারলেক, ক্রিস্টিনা আগুইলেরা এবং রায়ান গসলিং-এর সাথে। এরপরের উপাখ্যান এখনো তারুণ্যের ঝংকার তোলে। নামগুলো এখনো সংজ্ঞায়িত করে পপের স্পন্দনকে। আর বঙ্গদেশে ঝড় তুলে রক মিউজিকের স্বর্গকে!

দ্য ওয়ার্নার ব্রোস স্টুডিও (The Warner Bros. Studio Store) এনে হাজির করেছিল প্রতিটি বাচ্চার স্বপ্ন। বাগস বানি চরিত্রটি এখনো প্রিয় চরিত্র। প্রতিটি ঘরে এই পোশাক এবং আসবাবপত্রে পূর্ণ ছিল বাগস বানি। 

প্রায় ১৩০টি স্টোরে শীর্ষে ছিল এটি। এছাড়াও, তামাগোচি (Tamagotchi) নামের ডিজিটাল আবরণের পোষা পেটগুলো এখনো আলোড়িত করে অনেককে। ১৯৯৭ এর দিকে এই পেটগুলো প্রথম প্রকাশ ঘটে।

মিকি মাউস এন্ড বাগস বানি। Image from TheGreatDevin on DevianArt

এই সময়ের উল্লেখযোগ্য আরেকটি ঘটনা। বিল গেটস ঘোষণা করে, অ্যাপল দেউলিয়া হওয়াতে মাইক্রোসফট ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে সাহায্য করবে। স্টিভ জবস বলেছিল-

আমাদের এই ধারণাটি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে যে অ্যাপলকে জিততে হলে অবশ্যই মাইক্রোসফটকে হারাতে হবে।

জনপ্রিয় সিরিজ ফ্রেন্ডসের উত্থান ঘটে এই সময়ে। ‘আই উইল বি দেয়ার ফর ইউ’ এই লাইনটি ছাড়া বন্ধুত্বের জগত কল্পনা করাও ছিল খুব কঠিন সেই সময়ে। ২০ জন অভিনয়শিল্পীর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সিরিজটি দুই দশকের মধ্যেই এত জনপ্রিয় হবে হয়তো কেউই ভাবেনি তখন। 

নব্বইয়ের জনপ্রিয় সিরিজ ফ্রেন্ডস। Image from filmaffinity.com

শুধু কি সিরিজ? বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট (১৯৯১), আলাদিন (১৯৯২) এবং লায়ন কিং (১৯৯৪) দিয়ে ডিজনি হাজির হয় তাদের আলোচিত আখ্যানে। আলাদিনে জিনির ভূমিকা বিশেষভাবে শুধু রবিন উইলিয়ামসের জন্য লেখা হয়েছিল, যিনি ষোল ঘণ্টা ব্যয় করেছিল শুধু তার অংশের ডায়লগ আরো ভালো করার জন্যে!

ডিজনি রেনেসাঁর উত্থান হয় ১৯৮৯ সালের লিটল মারমেইড দিয়ে, যদিও নব্বইয়ের দশক এরিয়েলকে নিজেদের বলে দাবি করে। ১৯৮৯ এর দিকে শুরু হলেও এটি প্রভাব ফেলেছিল নব্বইয়ের দশকে। 

বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট ছিল প্রথম অ্যানিমেটেড ফিল্ম যা সেরা ছবির একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। আলাদিন, দ্য লায়ন কিং, পোকাহন্টাস এবং মুলানের মতো ক্লাসিক অ্যানিমেটেড ছিল সেরা কিছু ফিল্ম। 

ডিজনি থেকে চোখটা একটু সরিয়ে ১৯৯৭ সালে আনলে এক অনবদ্য আলোড়নের খবর পাওয়া যায়। সেই জাদুর স্কুলের ফ্যান্টাসি। তামাম দুনিয়াকে মোহিত করে হাজির হয় ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য সর্সারার্স স্টোন’।  

হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য সর্সারস স্টোন। Image from puzzlewarhouse.com

জে. কে. রাউলিং যিনি এই মহাকাব্যিক পুরো গল্পটি শেষ করেছিল তার গাড়িতে বসে! আসলে স্বপ্নপূরণের খোরাক কতটা আকাশস্পর্শী হতে পারে এই ঘটনাটি থেকে অনুধাবন করা যায়। 

১৯৯৩ সালে শুরু বেনি বেবিজের যুগ। যার স্লোগান ছিল-

Whatever you do, do not cut the tags.

নব্বই দশকের শিশুর ক্রিস্মাস লিস্টের অংশ। Image Source: EtsyUK

বেনি বেবিজের মধ্যে আলোচিত ছিল- লেগস দ্য ফ্রগ, স্কুইলার দ্য পিগ, স্পট দ্য ডগ, ফ্ল্যাশ দ্য অরকা, স্প্ল্যাশ দ্য হোয়েল, চকোলেট দ্য মুজ, প্যাটি দ্য প্লাটিপাস, ব্রাউনি দ্য বিয়ার (যা পরে নামকরণ করা হয়েছে কিউবি) এবং পিঞ্চার্স দ্য লবস্টার।

এই সময়ে “ম্যাকারেনা” এই ধারাটি একটি নতুন আবেশ সৃষ্টি করে। মুলত ১৯৯৫ সালের এই স্প্যানিশ হিট পপ-ডান্স, পপ সংস্কৃতিকে আরো সুউচ্চ স্থানে তুলে আনে।

প্রযুক্তির আরেক বিস্ফোরণ ছিল ১৯৯৮ সালে ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিনের উদ্ভাবন ‘গুগল’। মূলত স্ট্যানফোর্ডের ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিন ছিল এটি।

বর্তমান বিশ্বের এই মেগা কোম্পানিটি ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যানলো পার্কে তার যাত্রা শুরু করে ল্যারি পেজ ও ব্রিনের বন্ধু সুসান ওয়াজিকির গ্যারেজে!

গুগলের উত্থান। Image from Shakeuplearning.com

কিছুক্ষণের এই বর্তমান মুহুর্তও একটু পরে অতীতের পৃষ্ঠায় লেপ্টে যায়। ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে একসময় যা নতুন ছিল তা অবশ্যম্ভাবীভাবে পুরানো হতে হবেই। এবং নব্বইয়ের দশকও তেমন: এমন একটি দশক যা মনে হয় এইতো গতকালেরই ঘটনা অথচ সময়ের পরিক্রমায় সেটাও এখন প্রাচীন৷ 

২০১৩ সালে নিউইয়র্কের নিউ মিউজিয়ামে ‘এনওয়াইসি ১৯৯৩: এক্সপেরিমেন্টাল জেট সেট, ট্র্যাশ এবং নো স্টার’ উপস্থাপন করেন, যা বিল ক্লিনটনের সময় থেকে একটা পুরো সময়কে তুলে ধরে। 

মেটজে সেন্টার পম্পিডোর স্যাটেলাইট স্পেস মূলত ‘১৯৮৪-১৯৯৯: দ্য ডিকেড’ উন্মোচন করেছে সেই প্রজন্মকে। যা বিশ্বব্যাপী শিল্প সাহিত্যের এই ময়দানে ফরাসি শিল্পকে ফিরিয়ে আনে। 

ইতিহাসে নব্বই দশকের উত্তরণ কিছুটা আকস্মিক মনে হতে পারে কিন্তু এটি এমন একতরঙ্গ যা সময়কালের সমস্ত হিসাবকে দূর করে এখনো ‘সমসাময়িক’ মনে হয়। রাজনীতিবিদরাও আলোচিত ছিল এই দশকে নিজস্ব পরিক্রমায়।

ক্লিনটন এবং ব্লেয়ার, বসনিয়া এবং রুয়ান্ডা এই নামগুলো এই দশকের এক একটা কম্পন। গ্রুঞ্জ রক এবং অ্যালি ম্যাকবিল–এই শোগুলি উম্মোচিত করেছিল আলোচ্য ব্যক্তি বা ঘটনাগুলোকে। 

ক্লিনটন স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়ে তার সেক্রেটারি মনিকাকে নিয়ে অপরদিকে আরেক লোমহর্ষক ঘটনা ১৯৯৩ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যা! 

গণহত্যার ইতিহাস, রুয়ান্ডা। Image from: thesentinelproject.org

একটু রুয়ান্ডার ইতিহাস নিয়ে তাকালে, রুয়ান্ডার জনগণের মধ্যে মূল দুই গোষ্ঠী হচ্ছে হুতু ও তুতসি, যার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় হুতু। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডা দখলে নেয় বেলজিয়াম। তারা রুয়ান্ডার ক্ষমতায় বসায় তুতসিদের। দেশটার ব্যবসা-বাণিজ্য এই তুতসিরা নিয়ন্ত্রণ করতো।

১৯৬২ সালে রুয়ান্ডা ছেড়ে চলে যায় বেলজিয়াম। এরপর তুতসিদের হাত থেকে ক্ষমতা চলে যায় সংখ্যাগুরু হুতু সম্প্রদায়ের কাছে। ক্ষমতার পালাবদলে জমানো ক্ষোভ গণহত্যার রূপ নেয়। ১৯৯৩-৯৪ সালে সংঘটিত এই গণহত্যা মানবসভ্যতার এক নিকৃষ্টতম অধ্যায়। 

ইতিহাসের পর্ব সেরে প্রযুক্তিতে এই সময়কালের আরেক জনপ্রিয় সংযোজন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের উত্থান। শিল্প উৎপাদনের উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল। 

সেলিব্রিটি সংস্কৃতিও হুরহুর করে বেড়ে উঠছিল বিশেষ করে ব্রিটেনে। যেখানে তরুণ শিল্পীরা দখল নিয়েছিল ট্যাবলয়েডের প্রথম পাতা। যার সবচেয়ে বড় থিম ছিল বিশ্বায়ন। যেটি আস্তে আস্তে বিস্তরণ করতে থাকে প্রত্যেক দেশে। 

আর্টিফিশাল হেলস। Image from damianofina.com

যেহেতু ১৯৯০ এর দশক ছিল শৈল্পিক শৈলীকে চিত্রিত করার একটি অর্থবহ উপায়। এই দশকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আর্ট বই হল রিলেশনাল অ্যাস্থেটিকস (১৯৯৮)। ফরাসি কিউরেটর নিকোলাস বোররিয়ার এই বইটি যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছিল শিল্প আর বস্তুর কাঠামোকে। 

এই বইটি সেই দশকের সামনে আসা অনেক ফরাসি শিল্পীর শিল্পকে ভালভাবে বর্ণনা করেছিল। শুধু ফরাসী নয়, বইটি যুক্তরাজ্যের ডগলাস গর্ডন, থাইল্যান্ডের তিরাভানিজা এবং আরও অনেক শহরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল।

একটা বিশেষ দিক হলো নব্বই এর দশকে আইকনিক শিল্পীদের মধ্যে অল্প সংখ্যকই চিরায়িত মিডিয়াতে কাজ করেছেন। যেমন: এলিজাবেথ পেটন, যিনি কার্ট কোবেইন এবং লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর সাথেও কাজ করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। 

এলিজাবেথ পেটনের কাজ। Image from brantfoundation.org

কিন্তু এখন চিত্র ঘাটলে দেখা যায় ভিন্ন। এই দশকের প্রতিনিধিত্বকারী হিসাবে আমরা এখন ভাবি বেশিরভাগ শিল্পী যে কোনও একটি মাধ্যমের প্রতি প্রতিশ্রুতি ত্যাগ করে শুধুমাত্র দর্শকের নৈকট্য লাভের প্রতিশ্রুতিতে নিমজ্জমান! 

তাত্ত্বিক ফ্রান্সিস ফুকুইয়ামার মতে, ইতিহাসের এক সাংস্কৃতিক অধ্যায় ১৯৮৯ সালে শেষ হয় আর নব্বইয়ের দশক হলো গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদের চূড়ান্ত সূচনার প্রথম দশক। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ফুকুইয়ামার এই থিসিসটি চরম ভুল প্রমাণিত হয়। মানুষ যদি ইতিহাসের সমাপ্তির কথা বলতে না পারে, তাহলে ফুকুইয়ামান কি অর্থে সংস্কৃতির সমাপ্তির কথা বলতে পারে! 

নব্বই এর দশক এক টাইমলাইনের একটি বিন্দুর চেয়ে অনেক বেশি, তবে প্রথম দশকটি দীর্ঘ স্থবির যুগের। আসলে নব্বইয়ের দশকটি ছিল ভয়ংকর এক ভাল লাগার। ১৯৯২ সালে ফ্রান্সিস ফুকুইয়ামা ইতিহাসের সমাপ্তি ঘোষণা বলেছিলেন এবং প্রায় সবাই এটি বিশ্বাসও করেছিল। বিগত আশির দশক শেষ হয়ে গিয়ে মানুষ সম্মিলিতভাবে প্রবেশ করেছিল সাদা কাগজের একটি ফাঁকা শীটে!

উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে নব্বই এর দশকে সুখের অনুভূতি ছিল যা দীর্ঘ বসন্তে ঢাকা। যা এখন অদৃশ্য হয়ে গেছে বলে মনে হয়। অর্থ, কম্পিউটারও প্রযুক্তি দ্রুত ও সহজ হয়ে উঠছিল। প্রত্যেকের জন্য একটি সমতার বোধ এসেছিল। ইতিহাস শেষ হয়েছিল দুর্দান্ত অনুভব নিয়ে। 

নব্বইয়ের আলোড়ন সিম্পসন শো। Image from Pinterest

এই দশকটি অন্যতম নস্টালজিয়ার এক বাহন। নব্বইয়ের দশকটি কেবল একটি দশক ছিল না। এই দশক আমাদের ‘কার্ট কোবেইন’ এবং ‘দ্য সিম্পসনস’ এর মতো শো উপহার দিয়েছিল।

আবার রাজনৈতিক উত্থান-পতনের এক লহমা দেখায় উম্মুক্ত এই দশক।নব্বইয়ের দশকের বার্লিন প্রাচীরের পতন থেকে ৯/১১ পর্যন্ত সময়টা ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে এবং আমাদের রাজনীতিতে অসাধারণ পরিবর্তনের একটি অধ্যায়।

আমরা আজ যে জিনিসগুলির মুখোমুখি হচ্ছি তার অনেকগুলি শিকড় সেই সময় থেকেই এসেছে। এই দশকের আরেকটি আলোড়িত ঘটনা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন! 

যা আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯১ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর হয়। এই প্রেক্ষাপটে জারি করা হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৫টি প্রজাতন্ত্রের স্বাধীনতার স্বীকৃতিতে ঘোষণা নং ১৪২-হ। ফলে পতনের পর ১২টি সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র নিয়ে ‘স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রমণ্ডল’ নামক ১টি অবিভক্ত অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক সংগঠন তৈরি হয়। 

শক্তিশালী সৌভিয়েতের পতন। Image from theculturalexperience.com

ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান শক্তি, প্রেসের অবাধ স্বাধীনতা আর যাচাই-বাছাই, রাজনীতিতে বিনোদন, সংস্কৃতির উত্থান এবং ডিএনএ প্রমাণ সংগ্রহে প্রযুক্তির অগ্রগতি সবই ১৯৯৮ এর শুরুতে দুর্দান্ত ঝলক দেখিয়েছিল।

ক্ষমতার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় এমন ঘটনার ধারাবাহিক চিত্রের সূচনা হয় বার্লিন প্রাচীরের পতন দিয়ে। প্রযুক্তিগত বিপ্লব-এখন পর্যন্ত স্যাটেলাইট টিভি এবং ২৪-ঘন্টা সংবাদ প্রতিবেদন প্রভৃতির উৎকর্ষতার সাধন হয় এই দশকে। নেটস্কেপ, মোজাইক, ইন্টারনেট ব্রাউজার, সমগ্র বিশ্বের জন্য ওয়েবের এক নতুন দ্বার খুলে দেয়।

এই দশকের আরেক উজ্জল দৃষ্টান্ত সমকামীদের অধিকারের গর্জন। সমকামী ম্যাথিউর মা, জুডি শেপার্ড এই আন্দোলন নিয়ে বয়ানে বলেন:

সেই মুহুর্তে উকিল এবং কর্মীদের মাধ্যমে একটি পুরো প্রজন্মের জন্ম হয়েছিল।” সমকামী বিবাহ এবং সমকামী অধিকারের উত্থান ছিল নব্বইয়ের দশকের সেরা মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি।

নব্বইয়ে সমকামী আন্দোলন। Image from time.com

প্রযুক্তির আরও একটি আঘাত ছিল বৈশ্বিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের অদেখা উত্থান। যা সাহায্য করেছিল ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১-এর সকালে সেই আঘাত। নব্বইয়ের দশক শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং একটি নতুন দশকের শুরু ছিল এই আঘাত দিয়ে।

বার্লিন প্রাচীরের পতন স্নায়ু যুদ্ধ যুগের আরেক সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়। বৃহত্তর ঐতিহাসিক শক্তি আর ভূ-পলিটিকসের কেন্দ্র জার্মানি এক হয়ে যায় ২৮ বছর ধরে কমিউনিস্ট শাসিত থাকার পরে।  

পূর্ব গণতান্ত্রিকপন্থী এক হয়ে যায় পশ্চিমের সাথে, ভেঙে যায় বার্লিন প্রাচীর! এক রাতেই এক হয়ে যায় সমস্ত শক্তি। বিশ্ব রাজনীতিতে এটা ছিল এক নতুন চমক। 

বার্লিন প্রাচীরের ধ্বংস। Image from hubpages.com

এটি মূলত কখন এবং কীভাবে হয়েছিল তা একজন গোপন পুলিশ অফিসারের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে জানা যায়। ঘটনার সূত্রপাত হ্যারাল্ড জাগারকে দিয়ে। ক্যান্সারে ভয়ে আর উচ্চপদস্থদের হাতে অপমানে লাঞ্চিত হয়ে হ্যারল্ড সোজা পূর্ব জার্মানদের গেট দিয়ে হাঁটা শুরু করেছিল। 

গল্প চলবে….!! 

 

Feature Image: Getty Images 
References:

01. 15 things that happened in '90s that we'll never forget. 
02. The '90s: The decade that never forgotten. 
03. 1990s: The Good Decade. 
04. The '90s.  
05. '90s were best decade. 
06. Bangladessis bring down ershad regime. 
07. A Generation grew democracy. 
08. Memorable sporting moments from the '90s. 
09. History of Soviet Union.

5 COMMENTS

  1. অসাধারণ।মনে হচ্ছিলো যেন পর পর দৃশ্যাবলী চোখের সামনে সরেসরে যাচ্ছে। পরের এপিসোডের অপেক্ষায়।

  2. সুন্দর সময় গুলোকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছো।সেইদিন গুলো চোখে ভাসছে😥শুক্রবারের সিনেমা,আলিফ লায়লা সহ অনেক এপিসোডের জন্য পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করার মাঝে অনেক মজা ছিল।

  3. নস্টালজিক একটা দশকের ফিচার, খুবই তথ্যসমৃদ্ধ হয়েছে লেখাটি। লেখার মাঝে কাটখোট্টা ব্যপারটি নেই। মন দিয়ে লেখাগুলো লাইনগুলো পড়লেই বোঝা যায়। লাবণ্য শাহিদাকে যত দেখি ততই অবাক হই আমি। দেশীয় জ্ঞান ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও তার সমান দাপট। আজকের তরুণরা যে হতাশার নয় তা লাবণ্য বারবার প্রমাণ করে দেয়। এরকম জ্ঞান পিপাসা উৎসাহিত করে বাকিদেরও পড়তে।
    এ যুগের বিদ্যা বিনোদিনী বেগম রোকেয়া! মাশাল্লাহ।

    আমার সবচেয়ে যেটি ভাল লেগেছে সেটা হল লেখাটা খিটমিটে মনে হয়নি। খুব সুন্দর ধরণ শুরুটার। দ্বিতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষা এবার।

    ধন্যবাদ জ্ঞান তাপসীকে।

  4. খুব সুন্দর লিখেছেন আপু। মনে হলো যেন নব্বইতে ফিরে গেলাম। নব্বই দশক সত্যি ভোলার নয়।