ভ্রমন করতে পছন্দ করে না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। ইদানিং ঘুরাফিরা বেশ ট্রেন্ডে পরিনত হয়েছে। ট্রেন্ড হোক আর ভ্রমনের পিপাসা হোক মানুষ নিত্যনতুন জায়গা আবিষ্কার করছে, ভ্রমনের জায়গাগুলোতে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে, ভ্রমনের প্রতি মানুষের বেশ আগ্রহও বাড়ছে।
আর এই ট্রাভেলিং এর কথা আসলেই গ্রুপ ট্রাভেলিং এর পাশাপাশি এখন সলো ট্রাভেলিং খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ছেলেদের ক্ষেত্রে সলো ট্রাভেলিং একটু বেশি সহজ হলেও আমাদের দেশের মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু বেমানান এবং ভাবনার।
তবে এখন এসেছে দিন বদলের হাওয়া। মেয়েরাও হয়ে উঠছে আত্মনির্ভরশীল। তারাও জানে কিভাবে জিততে হয়, উপভোগ করতে হয় নিজের সুন্দর সময়গুলোকে। আর যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি ভুলার জন্য পাহাড় আর সমুদ্রের কাছে কে না যেতে চায়? ট্রাভেলিং গ্রুপ-এর সাথে সময় মেলাতে না পারা, সাথে কিছু বাধ্যবাধকতা থাকায় সলো ট্রাভেলিং এখন অনেক মেয়েরই পছন্দের তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
সলো ট্রাভেলিং বা একা ঘুরতে যাবার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। প্রথম এবং প্রধান সুবিধা হলো কারো জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। অনেক সময় দেখা যায় ঘুরতে যাবার প্ল্যান করা হচ্ছে পরিবার, আত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে। কিন্তু সময় হয়তো মিলছে না। ভ্রমণের জায়গা নিয়েও মতের অমিল হতে পারে।
এসব কিছুর সমাধান হতে পারে সলো ট্রাভেলিং। আবার যখন একাই বেরিয়ে পড়লেন অজানাকে জানতে, নিজের মতো উপভোগ করতে তখন কারো বাধ্যবাধকতার মাঝেও থাকতে হচ্ছে না। এতে করে নিজের মতো করে উপভোগ করতে পারলেন নিজের একান্ত সুন্দর সময়গুলো।
এছাড়াও, পরিবার-পরিজন ছেড়ে যখন অনেকটাই দূরে যাচ্ছেন তখন নিজের ভালো-মন্দ নিজে ছাড়া যাচাই-বাছাই করার আর কেউ থাকছে না। তখন নিজেই হবেন নিজের প্রতি যত্নশীল এবং আত্মবিশ্বাসী। তবে এক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হবে। তাই নারীদের সলো ট্রাভেলিং নিয়েই আজকের আলোচনা এবং সাথে থাকছে সেই সংক্রান্ত কিছু টিপস:
১. সময়োপযোগী ট্যুর প্ল্যান
যেহেতু সলো ট্রাভেলিং সেক্ষেত্রে নিরাপদ জায়গাগুলোকেই পছন্দ করে নিতে হবে। ভাবনা চিন্তার অন্তরালে এমন কোন জায়গা থাকতে পারে যা ফেসবুকে দেখা হয়েছে, বইয়ে পড়া হয়েছে অথবা মুভিতে দেখা হয়েছে। তখন থেকেই ভাবা হয়েছে সেই জায়গা ঘুরে আসবেন, মিটাবেন চোখের ক্ষুধা। কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল নলেজ না নিয়ে সেরকম জায়গায় যাওয়া সমীচীন হবে না মোটেই।
সেক্ষেত্রে অবশ্যই জানতে হবে ঋতুভেদে কোন জায়গাগুলো হয়ে উঠে অনেক আকর্ষণীয়। এর উপর ভিত্তি করেই নিতে হবে পরবর্তী পদক্ষেপ। কোথায় যাবেন, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন এসব কিছু আগে থেকে গুছিয়ে নিতে পারলে ট্যুরটি হবে অনেক সহজ ও উপভোগ্য।
২. পর্যটন স্পট সম্পর্কিত জ্ঞান:
সলো ট্রাভেলার হিসেবে এরপরেই বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে থাকার জায়গাকে। বিভিন্ন ট্রাভেল ব্লগ এর মাধ্যমে জেনে নেয়া যাবে বিভিন্ন জায়গার আবাসিক রিসোর্ট এবং হোটেল সম্পর্কে। নিরাপদ এবং একটা সুন্দর পরিবেশে থাকতে পারলে সলো ট্যুর অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
যেখানে ঘুরতে যাওয়া হবে সেই জায়গা সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা নিয়ে যেতে পারলে সবকিছু অনেকটাই সহজ মনে হবে। সেখানকার পরিবেশ, সেখানকার মানুষ, সংস্কৃতি এসব কিছুর ধারণার সাথে সেখানকার খাবার সম্পর্কে ধারণা রাখতে পারলে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস কাজ করবে।
৩. ভাবের আদান প্রদান:
স্থানীয়দের সাথে ভাবের আদান-প্রদান করতে পারলে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। পরামর্শ করে জেনে নেয়া যেতে পারে, কোন জায়গাগুলোতে যাওয়া নিরাপদ। বিশেষ কোন নিয়মাবলি আছে কিনা? সাথে জেনে নেয়া যেতে পারে ভালো খাবারের হোটেল সম্পর্কে।
সাথে যে হোটেল বা রিসোর্টে থাকা হবে সেখানকার স্টাফদের সাথে কথা বলে সবকিছু জেনে নেয়াটাই শ্রেয়। তাদের গেষ্ট হিসেবে তারা পজিটিভ বিষয়গুলোই সাজেস্ট করে থাকবেন।
৪. সজাগ ও সচেতনতা:
অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। যেহেতু সলো ট্রাভেলিং তাই কারো সাথে বেশি আন্তরিক না হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কোথায় থাকা হবে, কোথা থেকে আসা হয়েছে এসব বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। একা পেয়ে কেউ যদি পিছু নেয় বা বিরক্ত করে সাথে সাথেই ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতা গ্রহণ করা যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে আগে থেকেই চারপাশ সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন। অনেক সময় রিসোর্টের সামনে দিয়ে যেতে থাকলে শুনতে পাওয়া যায় এত পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট। এগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। সলো ট্রাভেলার হিসেবে বেশি রাত করে বাইরে না থাকাই ভালো। চেষ্টা করতে হবে খুব তাড়াতাড়ি রাতের খাবার শেষ করে থাকার জায়গায় ফিরে আসতে।
৫. পরিবার পরিজনকে প্রতিদিনের অবস্থান সম্পর্কে অবগত করা:
পরিবারের সাথে অথবা কাছের মানুষকে জানিয়ে রাখতে হবে পুরো ট্যুর প্লান। কোথায় যাওয়া হবে, কোথায় থাকা হবে সেই হোটেল বা রিসোর্টের এর ডিটেইলসসহ প্রতিদিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত করুন কাছের মানুষদেরকে। সাথে শেয়ার করে রাখা উচিত প্রতিদিনের লোকেশন। এতে করে সবাই থাকবে মোটামুটি দুশ্চিন্তামুক্ত।
৬. নিজেকে মানিয়ে নেয়া:
বিভিন্ন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়াটাই হলো একজন মানুষের অন্যতম গুণ। তাই আগে থেকেই শিখে নিতে হবে মানিয়ে নেয়া। তাহলে ঘুরতে গিয়ে কোন প্রতিকূলতার সাথে সহজেই মানিয়ে নেয়া যাবে। এতে করে আত্মবিশ্বাস তো বাড়বেই সেই সাথে নিজের প্রতি নিজের যে পজিটিভ চিন্তা ধারা গুলো ছিলো সেগুলোও হয়ে যাবে দ্বিগুণ।
সব সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও রয়েছে। সেটা শুধু নারী বলে অসুবিধার সম্মুখীন হবেন এমনটাও কিন্তু নয়। তাই অসুবিধাগুলোকে আত্মবিশ্বাসের সাথে মোকাবিলা করে যখন সুন্দর একটি ভ্রমনের স্মৃতির ঝুলি নিয়ে ফিরবেন তখনই উপলব্ধি করতে পারা যাবে একা ভ্রমনের সার্থকতা।
Feature Image: NerdWallet.com References: 01. Traveling Alone as a Woman. 02. Solo Travel for Women. 03. Female Solo Travel Tips. 04. How to Travel Alone. 05. Solo Travel for Women Startup Offers Tips.