IBM বা আইবিএম এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস কর্পোরেশন। আমেরিকান এই কম্পিউটার ম্যানুফ্যাকচারার প্রতিষ্ঠানটি ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এদের প্রথম লক্ষ্য ছিল কিছু নির্দিষ্ট বিজনেস হার্ডওয়ার তৈরি করা। আইবিএমের ইতিহাস আর জানা-অজানা কিছু বিষয় নিয়েই আজকের আয়োজন।
ইতিহাস
আইবিএম প্রথমে পরিচিত ছিল CTR বা কম্পিউটিং ট্যাবুলাটিং রেকর্ডিং কোম্পানি নামে। চার্লস র্যানলেট ফ্লিন্ট, ১৬ জুন ১৯১১ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে এরা ক্যালকুলেটিং ডিভাইসসহ নানা ধরনের বিজনেস প্রোডাক্ট তৈরি করতেন। ১৩ বছর পর, ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠানের নতুন প্রেসিডেন্ট নতুন করে এর নামকরন করেন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস কর্পোরেশন। এটির হেডকোয়ার্টার রয়েছে নিউইয়র্ক আরমংকে।
আইবিএম এর প্রথম কম্পিউটারের নাম IBM 650 Magnetic Drum Data Processing Machine, যা ১৯৫৩ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটা সেই সময়ে বিপুল পরিমানে তৈরি হয়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৬২ সালের মধ্যে ২০০০ এর মতো ভিন্ন ভিন্ন সিস্টেমের কম্পিউটার তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি।
আইবিএম-কে বিগ ব্লু নামেও চিনে থাকেন অনেকে। কেউ বলেন এই নাম এসেছে কোম্পানিটির নীল রং এর বিশাল কম্পিউটার থেকে। আবার কেউবা বলেন আইবিএমের নীলাভ লোগো আর অন্যান্য প্রোডাক্ট থেকে এসেছে এই নাম। অ্যাপেলের স্লোগান ‘থিংক ডিফারেন্ট’ কিন্তু আইবিএমের স্লোগান ‘থিংক’ থেকে এসেছে বলেই মানা হয়।
জানা-অজানা
প্রতিটি ছোট বড় প্রতিষ্ঠানের থাকে জানা-অজানা অনেক গল্প। আইবিএম-এর ১৫০টিরও বেশি দেশে নিজের ডালপালা বিস্তার করে আছে। তাদের জানা-অজানা গল্পগুলো হচ্ছে-
১. বর্তমানে ৩,৫০,০০০ এর বেশি কর্মচারী রয়েছেন, পৃথিবীর ১৫০টির ও বেশি দেশের মানুষ কাজ করেন এখানে। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ যোগদান করছেন এই প্রতিষ্ঠানের নানা বিভাগে। ২০১৩ সালে কর্মচারী ছিল ৪,১৩,০০০ জনের মতো। ২০২১ সালে, সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৩,৪৫,০০০। মজার ব্যাপার হলো প্রায় ৭০% মানুষ আসে সারা বিশ্ব থেকে এবং খোদ আমেরিকার কর্মচারী ৩০%।
২. এই প্রতিষ্ঠানের প্যাটেন্ট সংখ্যা ২,০৬,২৭২। এদের মধ্যে ৭৫৩৪ প্যাটেন্ট ২০১৪ সালে ইস্যু করা হয়। ১৯২০ সাল থেকে ইউএস প্যাটেন্ট এর সংখ্যা দেড় লক্ষের মতো। যদিও শোনা যাচ্ছে, স্যামসাং নাকি আইবিএমের প্যাটেন্টকে পিছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছে বর্তমানে। তবুও শত বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠানের মান ধরে রাখা প্রশংসার যোগ্য।
৩. এসপিএসএস ইঙ্কো ১৯৬৮ সালে এসপিএসএস প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আইবিএম এটি ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয়। ১৯৯৩ প্রতিষ্ঠিত রেড হ্যাট ২০১৮ সালে আইবিএম প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়।
৪. আইবিএম-এর কর্মরত ৩৩% মহিলা। আবার পুরো প্রতিষ্ঠানে যতজন ম্যানেজার আছেন, তাদের সংখ্যা ২৯%।
৫. অ্যাপেল-এর সিইও টিম কুক একসময় এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। ১৯৯২ এবং ১৯৯৬ সালে রস পেরোট ইউএস প্রেসিডেন্ট ক্যান্ডিডেট ছিলেন। তিনি এক সময় ছিলেন এটির টপ সেলস ম্যানদের মধ্যে একজন ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পেরোট সিস্টেম নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন।
গায়ক ডেভ ম্যাথিউস আইবিএমের একজন রিসার্চ সায়েন্টিস্ট ছিলেন। পিপল সফটের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড ডাফিল্ড এই প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার এবং মার্কেটিং রিপ্রেজেন্টিভ হিসেবে কাজ করতেন।
৬. এই প্রতিষ্ঠানের আছে ৬টি নোবেল প্রাইজ, ১০টি ইউএস ন্যাশনাল মেডেলস অব টেকনোলজি, ৫টি ইউএস ন্যাশনাল মেডেলস অব সায়েন্সসহ আরো অনেক অ্যাওয়ার্ড।
৭. প্রতি বছর ১০০টির মতো ভ্যাকান্সি ঘোষণা করা হয় প্রতিষ্ঠানটি থেকে, যার প্রতি পোস্টের বিপরীতে ১০৮টির বেশি অ্যাপ্লিকেশন পড়ে।
৮. ২০২০-২১ সালে প্রায় ২৪% কর্মী ছাটাই করার পরেও ইউএস এবং ভারতীয় কর্মচারির সংখ্যা এখনও সর্বাধিক। বর্তমান কর্মচারীদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যা প্রায় ১,৩০,০০০ জনের মতো।
৯. বিশ্বজুড়ে ১৫টি হাই-টেক ল্যাব রয়েছে এদের। এখানে কাজ করছেন ৩০০০ দক্ষ মানুষ।
১০. আজকের দিন পর্যন্ত, এই কোম্পানির অধীনে রয়েছে ১৮৩টি আলাদা আলাদা কোম্পানি।
১১. হার্ডওয়্যার তৈরির ক্ষেত্রে এই টেক জায়ান্টের প্রতিদ্বন্দী হলো ওরাকল, ডেল, এইচপি। সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে আছে মাইক্রোসফট, ওরাকল এবং আমাজন। আইটি সার্ভিসের উইপ্রো টেকনোলোজিস উল্লেখযোগ্য।
১২. ১৯৯২ সালে আইবিএম প্রথম স্মার্টফোন তৈরি করে। ৫০ হাজারের অধিক বিক্রি হয়েছিল সেই ফোন। এতে ছিল টাচ স্ক্রিন, ক্যালকুলেটরসহ বিল্ট-ইন কিছু অ্যাপস। বলে রাখা ভালো, সেই ফোনে মেইল করবার অপশনও ছিল। ২ এমবি র্যাম আর ২ এমবি এর ইন্টারনাল স্টোরেজের সেই ফোন এর নাম ছিল IBM Simon Personal Communicator.
১৩. ল্যাসিক সার্জারির পেছনে আইবিএমের যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তেমনই এটিএম মেশিন, ডাটা বেসড পাঞ্চিং মেশিন, ফ্লপি ডিস্ক, হার্ড ডিস্ক ডিভাইস, এসকিউএল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের মাধমে আধুনিক টেকনোলজিতে এনেছে আমূল পরিবর্তন। বিশ্বের ৯০% ব্যাংকে তাদের তৈরি প্রযুক্তির দেখা মিলবে।
১৪. চাঁদে মানুষ যখন পা রাখে প্রথম, সেই অভিযানে অনেক কিছুর সাথে জড়িয়ে ছিল আইবিএমের নাম। নাসার সাথে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে আসছে বর্ষীয়ান এই প্রতিষ্ঠানটি।
৪০০০ এর বেশি আইবিএম টেকনিশিয়ান অ্যাপোলো ১১ অভিযানে সহায়তা করে। তারা প্রোগ্রাম তৈরি, সফটওয়্যার তৈরি, কম্পিউটার তৈরিসহ নানাভাবে পুরো অভিযানে যুক্ত ছিল।
১৫. দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আইবিএম এর মতো এত বড় প্রতিষ্ঠানের কিছু কালো অধ্যায় আছে। এর মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই কোম্পানির টেকনোলজির ব্যবহার হয় ব্যাপক। জার্মানি এবং আমেরিকা দুটো পক্ষই সদর্পে এই টেকনোলোজি ব্যবহার করে নিজেদের কাজ হাসিল করেছিল।
Feature Image: ibm.com Sources: 01. International Business Machines Corporation. 02. IBM History. 03. IBM Trivia History and Things You Didn't Know. 04. IBM 30 Amazing Stats and Facts. 05. 25 IBM Facts.