মাইক্রোসফট – মানতেই হবে যে এই অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া এখনকার দুনিয়া অচল। পড়াশোনায় হোক কিংবা অফিসের কাজ, সবখানেই এই সিস্টেমের পদচারনা। মাইক্রোসফট-এর বেশ কিছু অজানা তথ্য আপনাদের জানাতে এলাম আজ। বেশ অবাক হবেন এই বিষয়গুলো জেনে। চলুন জেনে নেয়া যাক।
নামকরণ
১৯৭৫ সালে বিল গেটস পল এলেনকে একটা চিঠি লেখেন, তখনও এই টেক জায়ান্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সেই চিঠিতে প্রথম ‘মাইক্রোসফট’ শব্দের উল্লেখ করেন তিনি। মাইক্রোকম্পিউটার এবং সফটওয়্যার এই দুটো শব্দ থেকে শর্ট ফর্মে এসেছে মাইক্রো-সফট। বিলগেটস তার প্যাশনের জায়গা থেকেই এই নামের উৎপত্তি করেন। ১৯৭৬ সালে যখন কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করা হয়, তখন এই নামের মাঝের হাইফেনকে বাদ দেয়া হয়। উল্লেখ্য, পল এলেন এবং বিল গেটস ছিলেন স্কুলের বন্ধু।
লোগো
৪ রঙ-এর উইন্ডোজ লোগো সেই শুরু থেকে কতবার কতভাবে বদল হয়েছে, জানেন? অরিজিনাল সানস শেরিফ ফন্ট এবং সেই ৭০ দশকের ডিস্কো-এর জনপ্রিয়তার উপর ভিত্তি করে এই লোগো বানানো হয়। কিছু নরমাল, কিছু বোল্ড লাইনে করা হয় এই লোগো।
মজার ব্যাপার হলো, এই লোগো দুই লাইনে করা। মাইক্রোসফট-এর আর কোনো লোগো দুই লাইনে করা হয়নি। যারা মাইক্রোসফট ব্যবহার করে, সবাই কিন্তু এই লোগো বা এর পেছনের গল্প জানে না। ২৪ ঘন্টার কম সময়ে এই লোগো তৈরির পেছনে ছিলেন বিল এবং পল।
হার্ডওয়্যার না সফটওয়্যার
মাইক্রোসফট-এর নিজের নামে সফটওয়্যার তো আছেই। বর্তমানে উন্নতমানের হার্ডওয়্যার বিক্রির জন্য সেরার তালিকায় থাকা এই প্রতিষ্ঠান ১৯৮৩ সালে প্রথম বিক্রি করে একটি ইঁদুর। না না জেরি নয়, আমাদের নিত্য দিনের ব্যবহার করা এই ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস মাউস। বর্তমানে এক্স বক্স ওয়ান, এক্স গেমারদের পছন্দের তালিকায় প্রায় শুরুর দিকে আছে।
৪কে গেমিং এবং উচ্চক্ষমতার এই গেমিং কনসোল সবার সাধ্যের মধ্যে থাকে। মজার ব্যাপার হলো, হার্ডওয়ারের ক্ষেত্রে তারা প্রথম বিক্রি করেছিল মাউস এবং কি-বোর্ড।
প্রথম উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম
মাইক্রোসফট-এর যাত্রা শুরু প্রায় ১০ বছর পর, উইন্ডোজ এর প্রথম ভার্শন, উইন্ডোজ ১ উন্মুক্ত হওয়ার মাধ্যমে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হার্ডওয়ার প্রয়োজন হতো বলে খুব বেশি ভালো ফিডব্যাক এর ছিল না সেই সময়। আরো একটা নেগেটিভ ফিডব্যাক-এর কারন ছিল মাউস ব্যবহার করা লাগতো।
মাউস ব্যবহারে সবাই অভ্যস্ত ছিল না সেই কালে। কেবলমাত্র কি-বোর্ডের সাহায্যে সব কাজ সমাধান করা যেতো না। একারনে এই ১ অপারেটিং সিস্টেম প্রচুর নেগেটিভ ফিডব্যাক পায়। কিছুদিন পরেই এই অপারেটিং সিস্টেম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কোম্পানি।
যেভাবে এলো উইন্ডোজ নামটি
উইন্ডোজ বা জানালা ছাড়া এখন চলা কিন্তু অচল। যত সহজে উচ্চারণ করা যায় এখন ততটা সহজে কি ‘ইন্টারফেস ম্যানেজার’ উচ্চারণ করা যেতো? বিল গেটসের কোডিং-এর ক্ষমতা যত শক্তিশালী মার্কেটিং-এর ক্ষেত্রে ততটাই ভয়ানক ছিল। এই ইন্টারফেস ম্যানেজার নাম শোনার পর মাইক্রোসফটের মার্কেটিং টিম উইন্ডোজ নামটি কথা বললে, বিল গেটস রাজি হয়ে যায়। ভাবুন তো বিল যদি রাজি না হতেন তাহলে আমাদের কি অবস্থা হতো উইন্ডোজ আপডেটের বদলে ইন্টারফেস ম্যানেজার ১১ আপডেট বলতাম। এই ঘটনা সেই উইন্ডোজ ১ এর সময়কার।
প্রথম অপারেটিং সিস্টেম
MS-DOS অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে মাইক্রোসফট চ্যাপ্টার শুরু করে বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু, XENIX নামে একটি অপারেটিং সিস্টেম ছিল মাইক্রোসফটের রিলিজ করা প্রথম অপারেটিং সিস্টেম। UNIX অপারেটিং সিস্টেমের মডিফাইড ভার্সন ছিল এটি।
বেল ল্যাব প্রথম UNIX অপারেটিং সিস্টেম বাজারে আনে ১৯৭০ সালের দিকে। মাইক্রোসফট তাদের থেকে এর স্বত্ত গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে XENIX এর লাইসেন্স করে এবং বাজারে এর প্রচলন করেন ইন্টেল এবং এস সি ও-এর মত হার্ডওয়্যার কোম্পানির সাথে যুক্ত করে।
মাইক্রোসফট বাজারে আনে প্রথম ট্যাব
বর্তমানে বাজারে যেসব ট্যাব ব্যবহার হয় অনেকের ধারণা এটি অ্যাপেল প্রথমে প্রচলন করেছিল। ২০১০ সালে অ্যাপেল বাজারে প্রথম আইপ্যাড নিয়ে আসে। মজার ব্যাপার হলো আজ থেকে প্রায় ২১ বছর আগে ২০০১ সালে বিল গেটস সর্বপ্রথম ট্যাবলেট বাজারে প্রচলন করেন। উইন্ডোজ এক্সপি অপারেটিং সিস্টেমের এই ট্যাবলেটটি ছিল বেশ ভারী। ডিভাইসটি একেবারেই পোর্টেবল ছিল না আর ইউজার ফ্রেন্ডলি ছিল না। অথচ পোর্টেবল পিসি তৈরির জন্যই ট্যাবলেটটি তিনি বাজারে এনেছিলেন।
প্রোটোটাইপ এই ট্যাবলেটের ধারণা সেই সময় বাদ দিতে হয়। এই ধরনের ট্যাব ব্যবহার করার জন্য তখনকার বাজার প্রস্তুত ছিল না। যার কারণে ট্যাবলেটটি সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছায়নি। এছাড়া, বাড়তি দামেরও একটা ব্যাপার ছিল। ২০১০-এ অ্যাপেল যখন বাজারে প্রচলন করে তখন থেকে ট্যাবের আইডিয়া মানুষের মাথায় আসে। বলাবাহুল্য, বিল গেটস সময়ের অনেক আগে সবকিছু ভেবে রেখেছিলেন।
মাইক্রোসফট বাজারে আনে প্রথম স্মার্টওয়াচ
স্মার্টওয়াচ প্রথমে বাজারে আনে মাইক্রোসফট কর্পোরেশন। মাইক্রোসফট সম্পর্কে যত জানবেন তত বেশি অবাক হবেন। নাম শুনে মাথায় প্রথমেই আসে মাইক্রোসফট অফিস বা উইন্ডোজ এই বিষয়গুলো বা হার্ডওয়ার-এর কথা। কিন্তু ডিভাইসের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট পিছিয়ে ছিল না কখনোই।
১৯৯৪ সালে মাইক্রোসফট প্রথম স্মার্টওয়াচ বাজার আনে। সময়ের চেয়ে সবসময় এগিয়ে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি Timex DataLink 150 নামে একটি স্মার্টওয়াচেরসহ প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এলসিডি-এর এই স্মার্টওয়াচটি ১০০ মিটার পর্যন্ত পানি নিরোধক ছিল। উইন্ডোজ কম্পিউটারের সাথে সংযোগ করা যেতো এবং প্রয়োজনীয় তথ্য ডাউনলোড করার মতো অপশন ছিল। তবে, দুর্ভাগ্য এই যে এটিও বেশি বিক্রি হয়নি বলে বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
মাইক্রোসফট অফিস
মাইক্রোসফট অফিস হলো উইন্ডোজের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোডাক্ট। বর্তমান সময়ে প্রতিদিন প্রতিটা কাজে মাইক্রোসফট অফিসের একটা বড় অবদান রয়েছে; হতে পারে এক্সেল হতে পারে পাওয়ার পয়েন্ট হতে পারে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড। মজার ব্যাপার হলো এই প্রোডাক্ট কিন্তু প্রথমে রিলিজ করা হয় Macintosh জন্য।
১৯৮৯ সালে মাইক্রোসফট অফিস প্রথমে রিলিজ করা হয়। ব্যবসার খাতিরে এটি করা হয় কারণ সেই সময় উইন্ডোজ পিসির চাইতে এই কম্পিউটারগুলো জনপ্রিয়তা অনেক বেশি ছিল। বছরখানেক পরে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে মাইক্রোসফট অফিস যুক্ত করা হয়।
একটি মজার তথ্য দিয়ে রাখি, মাইক্রোসফট অফিসের সব থেকে জনপ্রিয় ফাংশন হলো এক্সেল শুধু আজকে না। ১৯৮৯ সালে, সেই রিলিজের পর থেকে। তৎকালীন সময়ে প্রচলিত সমস্ত স্প্রেডশিটকে পেছনে ফেলে নিজের অবস্থান পোক্ত করে নেয় মাইক্রোসফট এক্সেল। আজো তার জায়গা কেউ টলাতে পারেনি।
মাইক্রোসফট বনাম অ্যাপেল
১৯৯৭ সালের কথা, টেক জায়ান্ট অ্যাপেল তখন বেশ কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। স্টিভ জবসকে ছেড়ে দেবার পর, কোনো প্ল্যান আর স্ট্রাটেজি ছাড়াই এই প্রতিষ্ঠান নানা প্রোডাক্ট বাজারে আনে। বিল গেটস, স্টিভ জবস ফিরে আসার পর প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করে অ্যাপেল-এ। মাইক্রোসফট-এর বিরুদ্ধে সব মামলা তুলে ফেলে। ১৯৯০ সাল থেকে মাইক্রোসফট আর অ্যাপেল এর বেশ আইনী ঝামেলা চলছিল। আর টাকা দেবার অন্যতম প্রধান কারণ কী ছিল জানেন? মাইক্রোসফট-এর জন্য যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অ্যাপেলকে প্রতিষ্ঠা করা।
Feature Image: freepik.com Sources: 01. Facts about Microsoft. 02. Microsoft. 03. Microsoft interesting facts. 04. History of the microsoft logo. 05. All microsoft logos.