আড়াই বছর তৌসিফ ভাইয়ের পিছনে ঘুরে অবশেষে হার মেনে শান্তনা পুরষ্কার হিসেবে মা বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে গিয়ে জানতে পারি তৌসিফ ভাইও এতদিনে আমাকে পছন্দ করে ফেলেছে।একদিকে ক্রাশের ভালো লাগার কথা শুনে যতটা খুশি হয়েছি তার থেকে বেশি দুঃখি হয়েছে নিজের বিয়ের জন্য।মনে মনে আপসোস করতে লাগলাম কেন যে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করছি।কিছুটা আঙ্গুর ফল টক বলে চলে যাওয়ার সময় আঙ্গুর ফল যেন পিছন থেকে ডেকে বলছে আরে আপু আঙ্গুর খেয়ে যাও।নইলে যে পরে পস্তাবে। সত্যি আমি এখন পস্তাচ্ছি।মন বলছে এই বিয়ে করিসনে।আবার হবু বরের কথা চিন্তা করেও খারাপ লাগছে।তাই সিদ্বান্ত নিয়েছি মা বাবাকে সামনা সামনি বলে দিবো এ বিয়ে আমি করছি না।যে ভাবা সে কাজ কিছুটা সিনেমার স্টাইলে আব্বুর কাছে গিয়ে বললাম
— পাপা মুঝে যানে দো।মে ইয়ে শাদি নেহি কারসাকতা।মেরা রাজ মুঝে ফুকার রাহিয়ে।
ভেবেছিলাম এটা বলার পর আব্বু বলবে
— যা সিমরান যা,জিলে আপনি জিন্দিগি।
কিন্তু ঘটলো তার উল্টো। আব্বু বলে বুঝছি তুই আমাদেরকে ছেড়ে যেতে চাস না তাই এসব বলছিস।অন্য দিকে আম্মু এসে বলে আরে তা না আমাদের মেয়ের বিয়ে করার অনেক তাড়া।তাই আব্বু আম্মুর কথা মত বিয়ের তারিখটাও আগিয়ে দিলো।এদিকে আমার খালাতো বোন যেদিন থেকে আমার হবু বরকে দেখেছে সেদিন থেকে তার গুণগান গাইতে গাইতে আমার কান পাগল করছে।আর অন্যদিকে তৌসিফ ভাইও কেন জানি আজকাল খুব প্যারা দিচ্ছে।উনাকে আর আগের মত ভালো লাগেনা।তাই সিদ্বান্ত নিলাম বিয়েটা করেই ফেলবো।তাই তৌসিফ ভাইকে ইগনোর করে নিজের বিয়ের জন্য প্রস্থত হচ্ছি।কিন্তু বিয়ের দিন কেন জানি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দুইটা ম্যাসেজ দেখতে ফেলাম।
১ম ম্যাসেজ আমার আমার খালাতো বোনের তিনি লিখেছে — আপু দুলাভাইটা সত্যি অনেক কিউট আর সুইট রে।আমি উনাকে আমার মন দিয়ে ফেলেছি।প্রপোজ করে দেখবো উনি এক্সেপ্ট করে নাকি।তাই প্রপোজ করতে যাচ্ছি।উইশ মি লাক।
এ ম্যাসেজ পড়ে কিছু বলার নেই।খালাতো বোনতো এমনিতেও পাগল টাইপের।জানি উনি ওরে পাগল ভেবে মানা করে দিবে।আর খালাতো বোনটা কান্না করতে করতে আমার কাছে আসবে।
২য় ম্যাসেজ হবু বরের দেখে ভেবে নিয়েছি আমার খালাতো বোনের কথা জানাতেই উনি ম্যাসেজ করেছে।তাই উনাকে সরি বলে রিপ্লাই দিতে গিয়ে দেখি উনি লিখেছে — ক্ষমা করবা।তোমার থেকে ও তোমার খালাতো বোন আমাকে বেশি ভালোবাসে।তোমার বোন আমাকে ছাড়া বাচবে না।আমি তাকে ফিরিয়ে দিতে পারলাম না।তাই তোমাকে আমি করতে পারছিনা।আমরা পালিয়ে বিয়ে করছি।আমাদের জন্য দোয়া করবে।
কতক্ষন মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে রইলাম।এদিকে পুরো বাড়িতে খবর ছড়িয়েছে জামাই তার হবু বউয়ের খালাতো বোন নিয়ে পালিয়েছে।সবাই এসে আমাকে সান্তনা দিচ্ছে।আর কান্না কাটি করছে।আর আমি কিছু না ভেবে তৌসিফ ভাইকে ম্যাসেজ দিয়ে বললাম আপনি চাইলে আমাকে বিয়ে করতে পারেন।পরিবার এখন মেনে নিবে।কিন্তু সেখানেও হতাশ।উনি ম্যাসেজ দিয়েছে
— সরি।আমার আরেকটা রিলিশন হয়েছে।তোমার তো কোনো কিছু সিউর ছিলোনা।তুমি বরং বিয়েটা করে ফেলো।তোমাদের জন্য শুভকামনা।
আর কিছুই বলার নেই।অবশেষে হতভাগী মেয়ের মত এফবি তে পোস্ট দিলাম
“আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা
আমি বাধি তার ঘর
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মরে করেছে পর।
যে মোরে করিল পথের বিবাগী
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি।”
লেখাঃ আরোহী ইবনাত অরিত্রী