মেয়ের জন্য…

5560
0

ইদানিং রাতের বেলাটা আমি ইউটিউব দেখে এটা-ওটা রান্না করি। কেন যে হুট করে রান্নার শখ জেগেছে আমার তা জানি না কিন্তু সাতটা-আটটা বাজার সাথে সাথে মনে হয় আজ কি রান্না করা যায়? ফ্রীজে কি আছে? দিনে লতিফা বুয়া যা রান্না করে দেয় তার কিছুই প্রায় শেষ হয় না, তবু রাতে আমি নতুন করে সব করি। মুগের ডাল দিয়ে মুরগী, অনেক বেশি ধনিয়া পাতা দিয়ে বোয়াল মাছ, কখনো স্প্যানিশ ওমলেট বা অন্যকিছু! প্রতিরাতে নতুন নতুন রেসিপি। কোনদিন কোন কোন আইটেম এতই খারাপ হয় যে মুখেই তোলা যায় না আবার হঠাৎ হঠাৎ কোনটা এতই ভাল হয় মনে হয় যেন অমৃত। লতিফা বুয়া প্রতি সকালে ফ্রীজ ভর্তি রান্না আর ডাইনিং টেবিলে দীর্ঘ কাঁচা-বাজারের লিস্ট দেখে খুবই অবাক হয়ে যায়।

‘’ভাইজান, ফিরিজ ভরা তরকারী, আজকে আবার কিছু রান্ধুম নাকি ওইগুলাই গরম কইরা দিমু?’’
দিনে আমার কিছুই খেতে ইচ্ছা করে না, সেরকম কিছু খাইও না তাই লতিফাকে বললাম,
‘’তোমাকে আর দিনে রান্না করে দিতে হবে না, শুধু বাজার করা আর অন্য কি কা কাজ আছে সেগুলো করলেই হবে। ভেবো না, বেতন আগে যা ছিল তাই থাকবে।‘’
লতিফা খুবই অবাক হয়! সে এমনিতেই একটু ন্যাকা স্বভাবের আছে, রান্না করতে হবে না শুনে দুঃখ দুঃখ গলায় বলে,
‘’ভাইজান, আমার রান্না কি আর খাইতে পারতাছেন না? হেই লাইগাই না করতাছেন! আমার রান্না কি খুবই খারাপ? আজ যদি আপা থাকতো তাইলে এই কথা কইতে পারতেন!’’

বলেই চোখ-মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কান্নার ভঙ্গি করে; আমার এসব খুবই যন্ত্রনা লাগে। কাজের মানুষ ছাড়া একেবারেই চলা যায় না জন্য লতিফাকে রাখা। ঘর মোছা, কাপড় কাচা, বাসন-কোসন মাজা, বাথরুম পরিস্কার করা, বাজার করা এসব কাজ আমি পারি না, তাছাড়া অপরিস্কার ঘর-বাড়ি আমার ভালোও লাগে না তাই লতিফাকে দরকার হয়। লতিফা প্রায় দশ বছর থেকে আমার বাসায় কাজ করছে। তাকে এনেছিল সুচিত্রা। সুচিত্রা সংসারের কাজ ঠিকঠাক তখনো জানতো না, কাজেই মেয়ে কি করে সংসার গোছাবে এই চিন্তায় সুচিত্রার মা লতিফাকে ঠিক করে দিয়েছিল। ধীরে ধীরে সুচিত্রা সব কাজ শিখে যাওয়ার পরেও লতিফাকে আর কাজ থেকে ছাড়ানো হয় নি! সুচিত্রা মারা গেছে প্রায় পাঁচ বছর হলো, তবু লতিফা যায় নি। যে মানুষটার জন্য লতিফার আসা সে আজ এখানে নেই কিন্তু লতিফা রয়ে গেছে।

সারাদিন লেখালেখি করার তালে চা-কফি ছাড়া আর কিছু খাওয়া হয় না, সাতটা বাজার সাথে সাথে ক্ষুধায় চোখ-মুখ অন্ধকার হয়ে যায়। সন্ধ্যার পরের এই সময় থেকে রাত বারটা পর্যন্ত আমি লিখি না। নিজের মতো থাকি। কিছ একটা রান্না করি, বই পড়ি নয়তো সিনেমা দেখি, চ্যানেল পাল্টিয়ে পাল্টিয়ে টিভি দেখি, গান শুনি। কিছুই করতে ভাল না লাগলে বারান্দায় রাখা সুচিত্রার প্রিয় চেয়ারটায় চুপচাপ বসে থাকি চোখ বুজে, শরীরের প্রতিটা কনায় যেন একাকিত্ব জাপটে ধরে, আমার খারাপ লাগে না। একা একা থাকাটা আমার কাছে যেন নেশার মতো হয়ে গেছে, এই একা জীবনে হঠাৎ অতিথির মতো আজকাল কেউ এসে পড়লেই বরং আমার খুব উৎপাৎ লাগে। সুচিত্রা মাঝে মাঝেই বলতো,
‘’তোমার কাউকে দরকার নেই জানো অভিরূপ? তুমি দিব্যি একা থাকতে পারো, আমি এই যে তোমার সাথে আছি তবু মাঝে মাঝেই মনে হয় তুমি ভুলে গেছো যে আমি আছি। তোমার ভিতর যেন চিৎকার করে বলে, একা থাকতে দাও, একা থাকতে দাও! তোমার প্রায় সব গল্প-উপন্যাসেও কেউ না কেউ থাকে এরকম একা। তোমার এই অদ্ভুত একাকিত্বকেই বোধহয় আমি ভালবাসি। খুব মায়া হয়।‘’

সুচিত্রা মারা যাবার পরপর এই একাকিত্বটা আমার খুব অসহ্য লাগতো, ফাঁকা বাড়িটা যেন গিলে খেতে আসতো, সুচিত্রার ছবির মতো সাজানো পড়ার ঘরটা, ঝুল বারান্দাটা, চেয়ারটা আমাকে নিঃশেষ করে দিতো। লিখতে পারতাম না, লেখালেখি একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম, বাসায় তালা ঝুলিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলাম। ঝোলা ব্যাগে দুইটা শার্ট, দুই-তিনটা বই আর অল্প কিছু টাকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিলাম। ফোন আমার লাগতো না, সুচিত্রা ছাড়া খোঁজ নেয়ার আমার কখনোই কেউ ছিল না। কোথায় কোথায় ঘুরে, রাস্তাঘাটে খেয়ে ঘুমিয়ে প্রায় আট-নয় মাস পরে যখন আমি ফিরেছিলাম তখন আমার মাথাভর্তি শুধু লেখা গিজগিজ করে, হাতে কলম নিলেই লেখা নেমে যায়, দিনরাত অমানুষের মতো লিখে যেতাম। আমি আমার লেখা নিয়ে সুচিত্রার না থাকাটা আস্তে আস্ত মেনে নিয়ে ভিতরে-বাইরে সম্পূর্নভাবেই একা হয়ে গেলাম।

কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘’আপনি কেমন আছেন?’’
আমি বলে দিতে পারি, ‘’ভাল আছি।‘’ খারাপ তো নেই, ঘুম থেকে উঠছি, লিখছি, সময় কাটাচ্ছি, ভাল আছি। মাঝে মাঝে কোন গল্পের প্লট সুচিত্রাকে শোনাতে ইচ্ছা করে, সুচিত্রার হাতের চা খেতে ইচ্ছা করে, এরকম আরো কিছু, তাছাড়া আমি খারাপ কোথায় আছি? ভাল আছি, বেশ আছি।
এইবার শীত খুব বেশি পড়েছে। বেশি শীতে লিখতে হাত অসাড় হয়ে যায়, লিখতে আলসেমিও লাগে। নতুন লেখাটা এইসব কারনে এগোচ্ছে না, এদিকে ‘বইমেলা’র সময় এগিয়ে আসছে, ফেব্রুয়ারী মাস পড়লো বলে। প্রকাশনীর লোকজন তাগাদা দেয়া শুরু করবে করবে ভাব!

কাল রাতে কেক বানিয়েছিলাম, চকলেট কেক। কিন্তু যে বস্তুটা বানিয়েছি সেটা আদৌ কেক হয় নি, কি যে হয়েছে কেউই বলতে পারবে না। সেই অখাদ্য কুৎসিত কেকটা টেবিলে পড়ে আছে। আমি বেলা করে ঘুম থেকে উঠে ঝিম মেরে বসে কেকের দিকে তাকিয়ে আছি, এগারটা বেজে গেছে, এখনো লতিফা আসে নি। সে কালও আসে নি।কি হয়েছে কে জানে! ঘর-বাড়ি নোংরা লাগছে, নোংরা পরিবেশে লিখতে ইচ্ছা করছে না। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। নিশ্চয় লতিফা এসেছে, আমি হাঁফ ছেড়ে দরজা খুলে দিয়ে চমকে উঠলাম। লতিফা আসে নি, আট-নয় বছরের একটা পুচকে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে গম্ভীর হয়ে, শীতে তার ছোট্ট শরীর হালকা কাঁপছে, গায়ে পাতলা একটা সোয়েটার। আমি অবাকস্বরে বললাম,

‘’কাকে চাই তোমার?’’
মেয়েটা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
‘’এইরম দরজা আটকায়া দাঁড়ায়ে আছেন ক্যান? সরেন। আমি ঢুকবো।‘’
আমি এইবার রীতিমত আকাশ থেকে পড়লাম। ঢোকার রাস্তাটা আরো আড়াল করে বললাম,
‘’তুমি কে? কোথায় ঢুকবে? কেন?’’
মেয়েটা এইবারে যেন খুবই রেগে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে মুখ খিচিয়ে বললো,
‘’বেশি কথা কন কেন! শীত লাগতেছে, ভিত্রে যাইতে দেন, কাজ কইরা দিয়া বাড়ি যামু। মা পাঠাইছে।‘’

কে তার মা, কেনই বা তাকে পাঠিয়েছে, এইসব কথা আর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম না, বাসায় ঢুকুক তারপর জিজ্ঞেস করা যাবে। আমি রাস্তা দিলাম। বয়সের তুলনায় মেয়েটার কথা-বার্তা খুবই পাকা পাকা। বাচ্চা-কাচ্চা সম্পর্কে আমার ধারনা শূন্যের কোঠায়, আমি তাদের ব্যাপারে কিছু বুঝি না, এখনো বুঝতে পারলাম না। আমি চুপচাপ মেয়েটার কান্ড-কারখানা দেখতে লাগলাম। সে ঝাড়ু নিয়ে প্রথমে ঘর ঝাড়লো, ঠিক ঝাড়লো না আসলে ঝাড়ুটা শুধু চালিয়ে নিয়ে গেল, ধূলাময়লা যা যেখানে ছিল সেখানেই থাকলো। ঘর মুছতে যেয়ে গোটা মেঝে পানি দিয়ে প্যাচপ্যাচে করে ফেললো, রান্নাঘরে গেল, মনোযোগ দিয়ে বাসন-কোসন দেখে আমাকে ডাক দিলো,

‘’কি কইরা ধুইতাম? অনেক উপ্রে তো!’’

কথা সত্যি। সিংকটা উঁচুতে, মেয়েটার নাগালের বাইরে। মেয়েটা খুব রাগী রাগী, আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,

‘’ধুতে হবে না, তুমি চলে যাও।‘’

মেয়েটা ঠোঁট উলটে বললো, ‘’একলা একলা ক্যাম্নে যামু? খালায় নিতে আইবো। আর আম্মায় বকবে। কইছে সব কাজ কইরা দিয়া তারপর বাসায় যাইতে।‘’

টুকটাক কথায় বুঝলাম এ হলো লতিফার মেয়ে। লতিফার জ্বর তাই মেয়েকে পাঠিয়েছে ঘরবাড়ি পরিস্কার করে দিতে, তাকে এখানে পৌঁছে দিয়ে গেছে তার কোন এক খালা। লতিফার এসব যন্ত্রনা দেখে আমি খুবই বিরক্ত হলাম, বাচ্চা একটা মেয়েকে কেউ কাজে পাঠায়?

‘’তোমার নাম কি?’’
‘’রূপা’’
‘’শোনো রূপা, তোমার কিছু করতে হবে না, তুমি এমনি ঘুরে বেড়াও, তারপর তোমার খালা নিতে আসলে খালার সাথে চলে যাবে, মাকে বলবে সব কাজ করেছো, আচ্ছা?’’

রূপা ফিক করে হেসে ফেললো, এতক্ষনের রাগী রাগী মুখটা হাসি হাসি হয়ে গেল। মাথায় কোঁকড়া চুল, বড় বড় মায়া মায়া চোখ, ফুটফুটে বাচ্চা। রূপাকে রেখে আমি আমার লেখার ঘরে যেয়ে লিখতে বসলাম, কিন্তু লিখতে পারলাম না, মাথায় কে যেন জানান দিচ্ছে, ‘’তুমি আজ একা নও, কেউ একজন আছে।‘’ বের হতেই দেখি রূপা গম্ভীর মুখে সোফায় বসে আছে। মেয়েটা কি কিছু খাবে?

‘’কিছু খাবে? ক্ষুধা পেয়েছে?’’
মেয়েটা উদাস ভঙ্গীতে বললো, ‘’নাহ। খামু না!’’

আমি নিজে থেকেই নুডলস বানালাম, নুডলস বানানোর সময় রূপা চুপচাপ আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো, বাটিতে নুডলস দেয়ার পরে সে সুন্দর একা একাই কাঁটা চামচ দিয়ে নুডলস তুলে খেল। মেয়েটা খুব বুদ্ধিমতী, অনেক কিছু জানে!

‘’তুমি স্কুলে যাও না রূপা?’’

‘’হু,যাই তো। আমি টুয়ে পড়ি। কিন্তু এহন শীতের ছুটি।‘’

রূপার মুখে গর্বের হাসি। আমি আর রূপা মিলে টম এন্ড জেরী দেখলাম, মোটু-পাতলু দেখলাম, রূপা তার স্কুলের গল্প করলো, আমাকে তার হাতের লেখা দেখালো, দুপুর বেলা আমি আর রূপা মিলে খিচুড়ি-বেগুন ভাজি খেলাম। রূপা মুখ গম্ভীর করে জানালো,

‘’খিচুড়ি খাইতে মোটেই ভাল হয় নাই, খুবই বাজে টেস হইছে।‘’

আমার মন একটু খারাপ হলো, এই প্রথম আমার রান্না কেউ খেয়েছে এবং খারাপ বলেছে। এতদিন তো শুধু একাই একাই খেয়েছি, আমি রূপাকে কথা দিলাম, পরের দিন অবশ্যই তাকে আমি ‘’অনেক টেসওয়ালা খিচুড়ি’’ রেঁধে খাওয়াবো। রূপা,সুচিত্রার প্রিয় চেয়ারটায় বসে দোল খেল, আমি এই বাড়িতে একা থাকি শুনে বললো, আমি কখনো ভুত দেখেছি কি না! দুজনে মিলে অনেক গল্প করলাম, আমাকে রূপা তার বন্ধু বানাবে কি না ভাবলো। ভাবতে ভাবতেই তিনটার দিকে রূপার খালা এসে ওকে নিয়ে গেল।

আজ অনেকদিন পর আমার মাথা ফুরফুরে লাগছে, আমি বাড়ির বাইরে বের হলাম। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলাম, কি ভেবে চিড়িয়াখানায় গেলাম। অনেক ছোটছোট ফুটফুটে বাচ্চা বাবা-মায়ের হাত ধরে ঘুরছে, বাঘ দেখে ভয় পাচ্ছে, বাঁদরের লাফঝাঁপ দেখে আনন্দ পাচ্ছে। আমার দেখে ভাল লাগছে! রূপা কি কখনো চিড়িয়াখানায় এসেছে? জিজ্ঞেস করা হয় নি। কাল জিজ্ঞেস করা যাবে, রূপা কি কাল আসবে? রাতের বেলা আমি একটা আর্ট খাতা আর রং এর বাক্স হাতে বাসায় ফিরলাম, রূপা ছবি আঁকতে ভালবাসে, আমার বাসায় রং-খাতা নেই জন্য সে খুবই মন খারাপ করেছে। আমার লেখার খাতা টেনে নতুন গল্পের নাম লিখলাম, ‘’হাতির পিঠে রূপা’’!

সুচিত্রা একদিন মন খারাপ করে বলেছিল,
‘’তুমি সবসময় বড়দের গল্প লিখো। বাচ্চাদের জন্য কিছু লিখতে পারো না?’’
আমি হোহো করে হেসে বলেছিলাম,
‘’না, পারি না। বাচ্চারা কি করে, কেমন হয় আমি কিছুই জানি না। লিখবো কেমন করে?’’
‘’তোমার মেয়ে যখন পড়া শিখবে, তখন যদি বলে, বাবার লেখা বই পড়বো! তখন কি করবে?’’
‘’আমার মেয়ে আসলো কোথায় থেকে?’’
‘’আসেনি এখনো,আসছে!’’
‘’মেয়েই হবে কি করে জানো সুচি?’’
‘’মন বলছে,মেয়েই।তুমি কি চাও?’’
‘’তুমি যা চাও!’’

‘’বাচ্চাদের একটা বই লিখো, কেমন? আমাদের মেয়ে যখন পড়া শিখবে তখন প্রথম গল্পের বই যেটা পড়বে সেটা যেন তোমার লেখা হয়! মেয়ে বড় হয়ে বলবে, আমি আমার বাবার লেখা বই প্রথম পড়েছি! ভাল না? লিখবে তো?’’

‘’আচ্ছা,লিখবো।‘’
‘’কথা দিলে?’’
‘’দিলাম!’’
‘’মাথা ছুঁয়ে?’’
‘’কি করছো সুচি?’’
‘’মাথা ছুঁয়ে কথা দিলে তো অভি?’’
‘’আচ্ছা দিলাম!’’

আমার মেয়েটার আজ পাঁচ বছর পূর্ন হতো, পড়া শিখে যেতো, বাবার লেখা বই পড়তো। আমি ভুলে গিয়েছিলাম। কি করে ভুলে গেলাম? আমার মেয়েটার জন্য বই লেখা হয় নি! সে আমায় ক্ষমা করবে তো? তার বাবা একটু দেরী করে ফেলেছে, সে আর তার মা একসাথে চলে যেয়ে বাবাকে সব ভুলিয়ে দিয়েছে! কেমন হতো সে? বাবার বানানো বাজে কেকটা খেত? বাবার হাত ধরে চিড়িয়াখানা যেত? আমি জানি না। শুধু জানি আমার লিখতে হবে, আমার মামনি যেখানেই থাকুক তার বাবার লেখা পড়ে নেবে, তার পড়া প্রথম বই! সে তার মায়ের সাথে ভাল থাকুক, আনন্দে থাকুক, খাতায় পড়া জলের ফোঁটাটা মুছে নিয়ে আমি লিখতে শুরু করলাম, আমার মেয়ের জন্য লেখা আমার প্রথম বই!

(________মেয়ের জন্য; প্রাঞ্জলিকা গোমেজ)