ভূতপ্রেত

4241
0
AmaderParis
Gosht Lover

আব্বা খবর পেলেন আমাদের দেশের বাড়ি (গ্রামে) ভাল একজন কবিরাজ আছেন, তার কবিরাজি গ্রাম জুড়ে বিখ্যাত, দেরি না করে আব্বা আমাকে আর আম্মাকে নিয়ে গ্রামে চলে আসলেন, আমায় একদিন বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দিলেন আব্বা, পরের দিন সকালে সেই কবিরাজের কাছে আমায় নিয়ে যাবেন বলেছেন, আমি অমত করলাম না, বাধ্য মেয়ের মতো কবিরাজের কাছে গেলাম, আমার আর আব্বার ঠিক সামনে কবিরাজ বসে আছেন, বড় বড় চোখ করে একবার আমার দিকে আরেকবার আব্বার দিকে তাকিয়ে বললেন-

– সমস্যা কার?
– হুজুর সমস্যা আমার মেয়ের।
– কি সমস্যা?
– হুজুর অনেকদিন হলো আমার মেয়ের শরীরে অন্য কিছু ভর করেছে।
– কি করে বুঝলি তোরা?
– হুজুর, মেয়ে রাত হলে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে চায়, ক্ষিদা লাগলে আগুন খেতে চায়, ঘুমানোর জন্য জঙ্গল খোঁজে,নতুন বিয়ের ঘ্রাণ পেতে চায় এমন অস্বাভাবিক অনেক কাজ করে যা দেখে মনে হয় অন্য কিছু ভর করেছে।
– কতদিন হলো এই সমস্যা?
– সাত-আট দিন হয়েছে হুজুর।
– আমি তোর মেয়ের সাথে কথা বলবো,তুই আমার পাশে এসে বস।

কবিরাজের কথা শুনে আব্বা আমার পাশ থেকে উঠে ওনার পাশে গিয়ে বসলেন, কবিরাজ দরাজ কণ্ঠে আমায় জিজ্ঞেস করলেন-

– ওই বহুরূপী শয়তান তুই কি চাস বল?
আমি আমতা-আমতা করে বললাম-
– আমি যা চাই তা তুই দিবি বদমাইশ?
আব্বা পাশ থেকে বলে উঠলেন-
– দেখেছেন হুজুর মেয়ে কেমন করে কথা বলে! আমার মেয়ে আগে কখনো এমন ভাবে কথা বলেনি।
কবিরাজ পাশ থেকে আব্বাকে চুপ থাকার ঈশারা করলেন, কবিরাজ আবার আমায় বললেন-
– কি দিলে তুই যাবি বল?
– আমার দলের সঙ্গে পরামর্শ করে তোকে জানাবো বদমাইশ।
– তোকে এক দিনের সময় দিলাম বহুরূপী, মেয়েটাকে ছেড়ে না গেলে তোর বারোটা বাজিয়ে ছাড়বো।

কবিরাজের বয়ান শেষ হওয়ার পর আব্বা আমায় বাড়িতে নিয়ে এলেন, আমি দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসে পড়লাম, মনে মনে ভাবতে লাগলাম “আজ না হয় কোন রকম সামাল দিলাম কিন্তু কাল কি করবো?”
চিন্তা করতে করতে হঠাৎ দিয়ে হেসে উঠলাম, আব্বা-আম্মা এক দৌড়ে আমার রুমে এসে উপস্থিত হলেন, আমি ঘাড় বাঁকিয়ে আব্বাকে বললাম-

– এইযে মুরব্বী, সাহস কত তোর? তোর বুকের কলিজা কত বড়? আজ তোর কলিজা বের করে ডিনার করবো।

আব্বা ভয়ে লাল হয়ে গেলেন, তোতলাতে তোতলাতে বললেন-

– ও বাপজান আমি কি করলাম?
– ওই বদমাইশের কাছে আমাকে নেওয়ার সাহস হয় কি করে তোর?
– ও বাপজান আমার ভুল হয়ে গেছে, মাফ কইরা দাও…
– ওই মুরব্বী শুন,আমি তোর মেয়ের শরীর ছেড়ে যাব তবে একটা শর্ত আছে।
– কি শর্ত বাপজান? যা বলবা তা মানবো, খালি আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দাও
– তোর পরিবারে আমি নতুন বিয়ের গন্ধ পেতে চাই, তোর পরিবারে যখন নতুন বিয়ে হবে তখন সেই বিয়ের ঘ্রাণে আমি তোর মেয়ের শরীর ছেড়ে যাব।
– বাপজান তুমি চিন্তা করো না, শুধু আমাকে একটু সময় দাও।
– একদিন সময় দিলাম তোকে।

আব্বা-আম্মা ভয়ে রুম ত্যাগ করলো।
আমি খিকখিক করে হেসে দিলাম, কি ভয়’টাই না আব্বা-আম্মাকে দিলাম! নিশ্চয় এবার আমার বিয়ে দেবে, আব্বার হাতে আর কোন উপায় নাই।
এত কষ্ট করে,এত কাহীনি করলামই তো শুধু বিয়ে করার জন্য।

আরমচে আমি রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম কিন্তু সকালে ঘটলো আসল ঘটনা, চোখ ঘষতে ঘষতে বাহিরের রুমে এসে দেখি কবিরাজ বসে আছে, পাশে আব্বা-আম্মা দাড়িয়ে আছেন, আব্বা কান্না করতে করতে কবিরাজকে বললেন-

– হুজুর জাতকুলে আমার এই একটাই মেয়ে, আমার পরিবারে বিয়ে দেওয়ার মত একমাত্র আমার মেয়ে আছে, ওর মা আর আমাকে তো দেখেছেন,আমাদের পক্ষে নতুন করে বিয়ে করা সম্ভব? পরিবারে নতুন বিয়ে সম্ভব কীভাবে? আমি আমার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে বাঁচবো কীভাবে? ওকে ছাড়া যে আমাদের ঘর একদম খালি হয়ে যাবে।

আব্বার সঙ্গে আম্মাও মাথা নাড়ালেন।
মনে মনে ভাবলাম “আব্বা এত বড় চিটিংবাজি করতে পারলো? বিয়ের ব্যবস্থা না করে কবিরাজকে নিয়ে আসলো!! এখন কি করবো?”

কবিরাজ আব্বাকে বললেন-

– চিন্তা করিস না, তোর মেয়ের ঘাড় থেকে বহুরূপী আজকেই নেমে যাবে।

কবিরাজ আমায় ডাকলেন, আমি কবিরাজের সামনে গিয়ে দাড়ালাম, কবিরাজ আমায় বললেন-

– কিরে বহুরূপী শয়তান, তোর খুব শখ হয়েছে নতুন বিয়ের ঘ্রাণ পাওয়ার তাই না?

আমি একটু একটু ভয় নিয়ে বললাম-

– বদমাইশ তুই চলে যা এখান থেকে, সময় হলে আমিও চলে যাব।

আমার কথা শুনে কবিরাজ নিজের ব্যাগে হাত দিলেন, কি যেনো একটা বের করে আব্বাকে বললেন-

– তোর মেয়ের মুখ চেপে ধর, এই মরিচের গুড়া আর ছাগলের বিষ্ঠা মিক্স করা জুস খেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

কবিরাজের কথা শুনে আব্বা আমার মুখ চেপে ধরলেন, কোন রকম আব্বার হাত সরিয়ে চিৎকার দিয়ে বললাম-

– আব্বা গো ও আব্বা আমারে মাফ কইরা দেন, আমি এই জীবনে আর কখন বিয়ে করার কথা ভাববো না, আম্মা গো তুমি অন্তত আব্বারে বলো আমাকে এই জুস না খাওয়াইতে, আমি আর কখনো শয়তানি করবো না।

কবিরাজ ঈশারা করলেন, আব্বা আমাকে ছেড়ে দিলেন,এক দৌড়ে রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম, বাহির থেকে কথার শব্দ শুনতে পাচ্ছি, আব্বা কবিরাজ কে জিজ্ঞেস করলেন-

– হুজুর কি বুঝলেন?

– এই বয়সে একটু আধটু ভূতপ্রেত ভর করেই, এই সব নিয়ে চিন্তা করিস না।

তারপর কবিরাজ খটখট করে হেসে উঠলেন।
তবে কি কবিরাজ আগেই বুঝতে পেরেছেন এই ভূত কোন ভূত!!
এখন এই মুখ কি করে দেখাবো!!
ছিঃ ছিঃ

লিখেছেনঃ Fatema Bibi