রান্নাঘর হতে মা খুন্তি হাতে ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ঐ দিকে তরকারি পুড়ে যাচ্ছে তাতে মার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।মনে হয় মা অষ্টম আশ্চর্য দেখছেন।
ছোটো ভাইটা আমার চারপাশে ঘুরে গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে।মানুষের চোখ ছয় ভাগের এক ভাগ নাকি কোটরের বাহিরে থাকে কিন্তু ছোটো ভাইয়ের চোখ দেখে মনে হচ্ছে বিজ্ঞানীদের এ তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা।বিজ্ঞজনের মতো মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ছোটো ভাই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
মা আর ছোট ভাইয়ের এরকম আচরণে আমি একটু বিচলিত হলেও, মাথা থেকে সব চিন্তা ঝেড়ে পড়ায় মনোযোগ দিলাম।একটু পর রুমে বড় আপুর প্রবেশ। আপু এসেই কপালে হাত রেখে বললো :” ভাই তোর কী শরীর খারাপ?” আমি মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দিলাম।আপু একটু অবাক হয়ে বললো :” মোবাইলটা কী হারিয়ে ফেলেছিস?” হাত দিয়ে ইশারা করে টেবিলের উপর রাখা মোবাইলটা দেখালাম।আপু বিড়বিড় করে কী যেনো বলে চলে গেলো।
বিশ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর মেসেঞ্জারের টুং টাং শব্দ বেজে উঠলো।মোবাইল হাতে নিয়ে মেসেঞ্জারে ঢুকামাত্রই আমি অবাক।বন্ধুদের পাঠানো স্ক্রিনশট দেখে দ্রুত ফেইসবুকে লগ-ইন করলাম।
বাবার পোস্ট দেখে আমার চক্ষুচড়ক গাছ।বাবা পোস্ট করেছে তাও আমাকে ট্যাগ করে।পোস্টে হা-হা রিয়েক্টের ছড়াছড়ি।বেশির ভাগ হা-হা দাতাই আমার বন্ধুরা।কয়েকজন মানবদরদী বন্ধু তা আবার শেয়ারও করেছে।
দ্রুতবেগে রুম থেকে বের হয়ে দেখি বাবা সোফায় বসে চা খাচ্ছে।আমাকে দেখেও তিনি না দেখার ভান করে বসে আছে।মোবাইলটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম:
~ বাবা,এসব কী?
~কী?
~এই যে তুমি আমার পড়ার ছবি দিয়ে পোস্ট দিয়েছো ” আমার বড় ছেলে পড়তে বসেছে,কেউ আমিন না লিখে যাবেন না।”
~দেখছিস যখন তুইও আমিন লিখে পড়তে বস যা।
রাগে দুঃখে বাবার সামনে থেকে চলে এসেছি। পড়ার ইচ্ছেটাই মাটি করে দিলো।এবছর আর আমার পড়তে বসা হলো না।
লিখেছেনঃ আরিফ হায়দার