ঝিনুক মরে কীসে?

4972
0

ফ্রান্সের মতো দেশে ঝিনুকের চাষ করা হয়৷ নানা ধরনের ভাইরাস ও জীবাণু ছাড়া পরিবেশ দূষণের ফলেও নাজুক প্রাণীগুলির অস্তিত্বের সংকট দেখা দিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিজ্ঞানী ও স্থানীয় ঝিনুকচাষিরা মিলে যার সমাধান করার চেষ্টা করছেন৷ ঝিনুক, মানুষের খাবার মতো ঝিনুক৷ দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের ঝিনুকচাষিরা তাঁদের জীবিকার ব্যাপারে শঙ্কিত৷

ঝিনুকচাষি জেরাল ভিও জানালেন, ‘‘ঝিনুকচাষের গোটা পর্বটা চলে তিন-চার বছর ধরে৷ প্রথম বছরে ঝিনুকগুলো খুব কাঁচা থাকায় তাদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মারা যায়৷ দ্বিতীয় বছরে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ঝিনুক প্রাণ হারায় – তৃতীয় বছরে আবার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ৷ ফসল তোলার সময় আমরা প্রতি দশটি ঝিনুকের মধ্যে একটিকে বিক্রি করতে পারি৷’’

ঝিনুক কীসে মরে, তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করছেন একটি ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা৷

এই সব পরীক্ষাগারে বিজ্ঞানীরা একটি ভাইরাস, তিনটি ব্যাকটেরিয়া ও একটি প্যারাসাইট নিয়ে কাজ করছেন৷ তারা বোঝার চেষ্টা করেছেন, ঝিনুকদের উপর এই সব জীবাণুর কী প্রভাব পড়ে৷ তারা বলেন যে, ঝিনুকের মতো নাজুক প্রাণীদের সুরক্ষিত করা আদৌ সহজ কাজ নয়৷

ঝিনুক প্রকল্পের সমন্বয়কারী ত্রিস্তঁ রেনো বললেন, ‘‘শক্ত খোলসওয়ালা কম্বোজীয় প্রাণী বা মেরুদণ্ডবিহীন প্রাণীর ক্ষেত্রে টিকা দেওয়া সম্ভব নয়৷ টিকার মাধ্যমে মানুষ অথবা গৃহপালিত জীবের শরীরে যে ‘অ্যান্টিবডি’-গুলি সঞ্জীবিত হয়, কম্বোজদের দেহে তা অনুপস্থিত৷’’

কিছু কিছু সম্ভাব্য সমাধান পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷ সবচেয়ে আশাজনক সমাধান সম্ভবত বাছাই ও সংকর প্রজাতি সৃষ্টি বলে গবেষকদের ধারণা৷ রেনো বললেন, ‘‘ঝিনুকদের মধ্যে কিছু কিছু ঝিনুক বেশি শক্তপোক্ত হতে পারে, ভাইরাল ইনফেকশন থেকে নিজেদের আরো ভালোভাবে রক্ষা করতে পারে৷ কাজেই আমরা হয়তো ভবিষ্যতে এই কড়া ধাতের ঝিনুকগুলিকে মিলিয়ে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা সম্পন্ন ঝিনুকের চাষ করতে পারব৷’’

পরিবেশ থেকে বিপদ

গরুমোষ মাঠেঘাটে চরে খায়৷ এমন একটি মুক্ত পরিবেশে ঝিনুকের চাষ করা হয়, যেখানে সাগরের পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা বা অম্লতা থেকে শুরু করে দূষণের মতো বিভিন্ন পরিবেশগত উপাদানের খেয়াল রাখতে হয়৷ ঝিনুকচাষি জঁ-পোল লোপেস বললেন, ‘‘ভাইরাস লাগতে পারে, আবার পরিবেশ দূষণও রয়েছে৷ নাইট্রেট, কীটনাশক অথবা জৈব সার, শেষমেষ সব কিছু সাগরে গিয়ে পড়ে৷ এছাড়া ময়লা পানি পরিশোধনের কারখানাগুলিও সবসময় নির্দিষ্ট মান মেনে চলে না৷’’

রেনো যোগ করলেন, ‘‘ঝিনুকরা মুক্ত প্রকৃতিতে বড় হয়৷ এখানে যেমন আমরা দেখছি, বারোটি কীটনাশক মিলে কীভাবে আরো শক্তিশালী একটি বিষ সৃষ্টি করে, যার আক্রমণ ঝিনুকদের পক্ষে আরো মারাত্মক হয়ে ওঠে৷’’

ঝিনুকচাষি জেরাল ভিও বললেন, ‘‘আমাদের মতো ঝিনুকচাষিদের কল্যাণে পরিবেশ, পানি ও পলিমাটির মান নিয়ে আরো বেশি গবেষণা হওয়া উচিৎ৷ গোটা পরিবেশ প্রণালীটা কীভাবে আরো ভালোভাবে চালানো যায়, আমাদের সেটা জানা দরকার৷’’

বাস্তব যতোই নির্মম হোক না কেন, বিজ্ঞানী বা ঝিনুকচাষি, কেউই হাল ছাড়তে রাজি নন৷

জেরাল ভিও-র বক্তব্য: ‘‘আমার যখন বিশ বছর বয়স, তখন আমি দেখি, একের পর এক ঝিনুকচাষি কীভাবে ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন৷ আমি যদি আশাবাদী না হতাম, তবে ৬৩ বছর বয়সে আমি এই ব্যবসায় থাকতাম না৷ আমি ঝিনুকচাষের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব৷ আমার ছেলেমেয়েরা আজও এই ব্যবসায়ে কাজ করছে – একদিন আমার নাতি-নাতনীরা এই পারিবারিক ঝিনুকচাষের ব্যবসায়ে কাজ করতে পারবে বলে আমার একান্ত কামনা৷’’ সূত্র: ডিডব্লিউ।