এক জেলে নদীতে মাছ ধরার জন্য জাল ফেলল। প্রথমবার জালে কোনো মাছ উঠল না। দ্বিতীয়বার জাল ফেলার পর লাল ও সবুজ রঙের দুটি মাছ উঠল। জেলে তৃতীয়বার জাল ফেলল। এবার তার জালে অদ্ভুত ধবধবে সাদা একধরনের মাছ উঠল। সে এর আগে কখনো এ ধরনের মাছ দেখেনি। মাছটি হাতে পেয়ে জেলে ভাবল, বাজারে এই মাছের চড়া দাম পাওয়া যাবে।
জেলে যখন মাছ বাজারে নিয়ে আসল, তখন চারপাশে মাছটি দেখার জন্য অনেক ভীড় জমে গেল। অনেকেই মাছটি কিনতে চাইল। সবচেয়ে বেশি দাম উঠল দশহাজার টাকা। কিন্তু জেলে ভাবল, আরো দাম উঠবে। অনেকক্ষণ ভেবে জেলে ঘোষণা দিল, ‘ত্রিশ হাজারের কমে এই মাছ বেচব না। এই মাছ পৃথিবীতে এক পিসই আছে।’
একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি জেলের ঘোষণা শুনলেন। তিনি জেলের কাছে গিয়ে বললেন, ‘আমি মাছ কিনব। তবে একটা শর্ত আছে, মাছের টাকা দিব ত্রিশ দিন পর। কিন্তু এই ত্রিশদিনের মধ্যে যদি এই মাছ আর একটা বাজারে দেখা যায়, তাহলে কোনো টাকা দিব না।’
জেলে তার শর্তে রাজি হলো। ত্রিশহাজার টাকায় মাছ বিক্রি করে সে মনের আনন্দে বাড়ি ফিরে এলো।
দেখতে দেখতে ত্রিশ দিন পার হয়ে গেল। এই ত্রিশ দিনে জেলে নদীতে জাল ফেলেনি। বাড়িতে বসে অলস সময় কাটিয়ে সে শুধু দিন গুনছিল কখন ত্রিশ দিন পার হবে। অলস সময় কাটানোর ফলে সে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
একত্রিশতম দিন সকালবেলা জেলে বাজারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এমন সময় সে দেখল, যেই ক্রেতা তার কাছ থেকে মাছ কিনেছিলেন, তিনি স্বয়ং জেলের বাড়িতে মুখবন্ধ বালতি নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। জেলে খুশি হয়ে ভাবল, লোকটি হয়তো তার মাছের দাম দিতে এসেছেন। কিন্তু তার এই খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না, যখন সে দেখল বালতির ভিতর ১০-১২ টা ওই অদ্ভুত ধরনের মাছ!
আসলে ওই অদ্ভুত মাছগুলো হলো একজাতের হাইব্রীড বিদেশি মাছ। কিছুদিন আগে এই জাতের উদ্ভব হয়েছে। জেলে এর আগে কখনো এ ধরনের মাছ না দেখার কারণে এটিকে মূল্যবান মনে করেছিল!
জেলে একটা মাছ বিক্রি করেই মাত্রাতিরিক্ত লাভের চিন্তা করেছিল। আমরাও যখন জীবনে সাফল্য অর্জনের চেষ্টা করি, তখন ক্ষেত্রবিশেষে ওই জেলের মতোই আচরণ করি। যেসব বিষয়ে আমাদের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা নেই, সেসব বিষয়কেই আমরা সাফল্য লাভের উপায় হিসেবে গণ্য করি। মনে মনে ভাবি, অমুক লোক যেহেতু ঐটা করে এত বড় হয়েছে, আমিও ঐটা করলে বড় হব। অথচ ঐ কাজ সম্পর্কে আমার কোনো অভিজ্ঞতা কিংবা ধারণাই নেই!
আমরা ভুলে যাই যে, নিজের অর্জিত জ্ঞান-অভিজ্ঞতার ভিতরেই প্রত্যেকের সাফল্যের বীজ লুকিয়ে থাকে। প্রয়োজন শুধু সেই জ্ঞান-অভিজ্ঞতাকে ঠিকমতো কাজে লাগানো। মনে মনে শুধু বিশ্বাস রাখতে হবে, “যে বিষয়ে আমার জ্ঞান আছে, সেই বিষয়ে চেষ্টা করলে আমি অবশ্যই সফল হবো ইনশাআল্লাহ।”