একজন বৃদ্ধ তার বাড়িতে দাওয়াত করেছেন এক তরুণকে। খাবারের মেন্যুতে বেশিরভাগই চর্বিযুক্ত খাবার। তরুণ খাবার খাচ্ছে। বৃদ্ধ পাশে বসে তরুণকে খাবার এগিয়ে দিচ্ছেন। খাবার খেতে খেতে তরুণ বৃদ্ধকে বলল, ‘আপনিও আমার সাথে খেয়ে নিন।’
বৃদ্ধ বললেন, ‘না বাবা, তুমিই খাও। আমি পরে খাব। আমার জন্য সুজি রান্না হচ্ছে। এসব চর্বিযুক্ত খাবার আমার হজম হয় না। তরুণ বয়স ও বৃদ্ধ বয়সের মধ্যে কত পার্থক্য দেখেছ!’
তরুণ বলল, আমাকে কি বলতে পারেন, একজন তরুণ ও একজন বৃদ্ধের মধ্যে মূল পার্থক্য কী?
বৃদ্ধ বললেন, মূল পার্থক্য হলো— প্রজ্ঞা আর শক্তিতে। একজন তরুণের ভিতর প্রজ্ঞা/জ্ঞান কম, কিন্তু শক্তি বেশি। অন্যদিকে, একজন বৃদ্ধের সারাজীবনের অর্জিত প্রজ্ঞা পাহাড়সমান হলেও তার তেমন শক্তি নেই। আর ভিতরে শক্তি না থাকলে প্রজ্ঞা অনেকটাই অর্থহীন।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বৃদ্ধ আবার বলতে লাগলেন, তরুণরা অসাধ্যকে সাধন করতে পারে। কিন্তু বৃদ্ধরা পারে না। কারণ প্রজ্ঞা আর শক্তির সমন্বয় ঘটালেই অসাধ্যকে সাধন করা সম্ভব। আর প্রজ্ঞা ও শক্তির সমন্বয় কেবল তরুণরাই ঘটাতে পারে, বৃদ্ধরা পারে না।
বৃদ্ধের কথা শুনে তরুণ বলল, আপনি কি তরুণ বয়সে অসাধ্যকে সাধন করতে পেরেছিলেন?
বৃদ্ধ হতাশ কণ্ঠে বললেন, না কিছুই পারিনি। তখন আমার ভিতরে প্রজ্ঞা ছিল না, ছিল শুধু আবেগ। আবেগের বশবর্তী হয়ে যা খুশি তাই করেছি। বাস্তবতাকে উপলব্ধি করিনি। আমার ভিতরে তখন প্রচণ্ড শক্তি ছিল, কিন্তু শক্তির যথার্থ ব্যবহার করতে পারিনি। প্রজ্ঞা ছাড়া তো শক্তির যথার্থ ব্যবহার সম্ভব নয়।
আর বলতে দ্বিধা নেই, তখন অনেকটা বনের পশুর মতো ছিলাম। ভিতরে ছিল না কোনো চারিত্রিক দৃঢ়তা। যৌবনের অপব্যবহার আমাকে তরুণ বয়সে জ্ঞানশূন্য করে রেখেছিল।
বৃদ্ধের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার পর তরুণ বলল, আমাকে কি বলতে পারেন, কীভাবে একজন তরুণ প্রজ্ঞাবান হতে পারে?
বৃদ্ধ বললেন, একজন তরুণ তখনই প্রজ্ঞাবান হবে যখন তার ভিতরে কোনো রিপু থাকবে না। মানুষের ভিতর ৬ টি রিপু থাকে। এই ৬ টি রিপু হলোঃ
১। কাম – ব্যাভিচার, বিবাহ বহির্ভূত যৌন সঙ্গকামনা।
২। ক্রোধ – রাগ, উত্তেজনার বশীভূত হওয়া।
৩। লোভ- পরের দ্রব্য আত্মসাৎ করার প্রবৃত্তি।
৪। মোহ – বিভ্রম, বিবেকশূন্যতা।
৫। মদ – অহংকার, গর্ব, আত্মগৌরব।
৬। মাৎসর্য- পরশ্রীকাতরতা, অন্যের ভালো দেখতে না পারা।
এই ৬ টি রিপু যদি তোমার ভিতরে না থাকে, তাহলেই তুমি প্রজ্ঞাবান হতে পারবে। অন্যথায় ভার্সিটির বড় বড় ডিগ্রিও তোমাকে সামান্যতম জ্ঞানের সন্ধান দিতে পারবে না।
কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধ কাঁদতে লাগলেন।
বৃদ্ধকে কাঁদতে দেখে তরুণ সহানুভূতিশীল হয়ে বলল, আপনি কাঁদছেন কেন?
বৃদ্ধ বললেন, এখন সবসময় অনুশোচনা হয়। মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরে একটা কালো রঙের হিংস্র জন্তু আমাকে ধিক্কার দিয়ে বলে, “আমাকে চিনতে পেরেছিস? আমি তোর হারিয়ে যাওয়া তারুণ্য। আমি তোর যৌবনকাল। তোর জীবনের এক সোনালি সময়ে আমি তোর কাছে এসেছিলাম। কিন্তু তুই আমার সদ্ব্যবহার করিস নি, করেছিস অপব্যবহার। সেই পাপের কর্মফল শুধু ইহকালেই না, পরকালেও ভোগ করার জন্য প্রস্তুত থাক!’’
বৃদ্ধের কথা শুনে তরুণ কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে রইল। তরুণের মনে প্রশ্ন জাগল, সে যখন বার্ধক্যে উপনীত হবে তখন তার যৌবনকালও কি তাকে এভাবে ধিক্কার দিবে?