লাহুল-স্পিতি ভ্রমণ

4426
0

হাওড়া থেকে যাত্রা শুরু করে তৃতীয় দিন ভোরবেলায় চন্ডীগড়৷ এখান থেকে মানালি হয়ে যাবো লাহুল-স্পিতির কয়েকটি জায়গায়৷ কাজা-নাকো-কল্পা-ছিটকুল৷ ফিরবো শিমলা হয়ে৷ চন্ডিগড় থেকে ভোরে রওনা দিয়ে সন্ধ্যায় এসে পৌছালাম মানালি৷ বিয়াস উপত্যকায় ছোট্ট শহর মানালি৷ সনাতন হিন্দু মুনি ‘মনু’-র নাম থেকেই মানালি নামের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়৷ এখানে হিড়িম্বা মন্দির ও বশিষ্ঠ মন্দির দেখার মত৷ এই শহর কে Gate Way of Lahul-Spiti ও বলা হয়৷

খোকসার

চারিদিকে আপেল গাছ, হিমালয় পরিবৃত এই শহরের সৌন্দর্য্য আলাদা মাত্রা এনে দেয়৷ খুব কাছেই সোলান ভ্যালী৷ হিমালয়ান ট্রেনিং ইন্সটিটিউশান ও এখানে৷ মানালি থেকে রওনা দিয়ে পরের গন্তব্য কাজা (১১,৯৮০ ফিট)৷ শহর থেকে বেরিয়ে রোটাং পাস (১৩,০৫৮ ফিট) পার হয়ে কেলং এর পথে খোকসার। রোটাং এর পথে বরফ এর নাম মাত্র নেই, সবে হাল্কা বরফ শুরু হয়েছে৷ আগে মে মাসে রাস্তার দুধারে যে উঁচু বরফের দেওয়াল দেখেছি তার পুরোটাই উধাও৷ খোকসার থেকে বাতাল-কাজা রাস্তা ধরে এগিয়ে চলা৷ সঙ্গে চলেছে CHENAB RIVER, যা পাকিস্তান থেকে এসেছে৷

চেনাব নদী

নদীকে সঙ্গী করে পৌঁছালাম বাতাল৷ রাস্তা বলতে গুড়ো পাথর, বোল্ডার ও মাটি মিশ্রিত রাস্তা৷ বাতাল থেকে অনেকটা এগিয়ে হাইওয়ে ছেড়ে চন্দ্রতাল রোড ধরে পৌছালাম চন্দ্রতাল (১৪,১০০ ফিট)৷ চন্দ্রতাল থেকেই চন্দ্র নদীর উৎস, যা পরে চেনাব নদীতে মিশেছে৷ ভীষণ সুন্দর এই চন্দ্রতাল৷ পাহাড়ের কোলে৷ গাড়ী যে পর্যন্ত্য যায়, সেখান থেকেও দেড় কিমি হাঁটা পথ৷ এখান থেকে কুনজুম পাস (১৫,০৬০ ফিট) পার হয়ে কাজা৷ কুনজুম পাস যখন পার হই তখন রাত নেমেছে৷ লোসার হয়ে যখন কাজা পৌছালাম রাত তখন অনেক গভীর৷ সাথে খুব ঠাণ্ডা৷ কাজার আবহাওয়া অনেকটাই লাদাখ এর মতো৷ COLD DESERT বলা যায়৷

পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে স্পিতি নদী৷ খুব ছোট্ট গ্রাম এই কাজা৷ SUB-DIVISIONAL HQ, লাহুল-স্পিতির৷ এখান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় – ‘কি’ মনাস্ট্রী, কি ভিলেজ, কিবের ভিলেজ (১৪,২০০ ফিট), লাংজা ভিলেজ (১৪,৩০০ ফিট), লাংজা বুদ্ধ মুর্তি ( উচ্চতা ৩৫ ফিট), কমিক ভিলেজ(১৬,০০০ ফিট) [উচ্চতম Motorable Village] এবং উচ্চতম পোস্ট অফিস ‘হিকিম’ (১৪,৪০০ ফিট)৷ পুরো স্পিতি উপত্যকাটাই বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব বেশী৷ হোটেল বা রেষ্টুরেন্টে “দলাই লামা” র ছবিতে ভর্তি৷ কিছু জায়গায় SAVE TIBET পোষ্টারও চোখে পড়েছে৷

চন্দ্রতাল লেক

কাজা থেকে রওনা দিয়ে ধানকার মনাষ্ট্রী দেখে টাবো হয়ে গিউ ভিলেজ৷ খুব সুন্দর গ্রাম এই গিউ৷ মনাষ্ট্রী টাতো ভীষন সুন্দর, ঝকঝকে৷ মনাষ্ট্রীর পাশেই ৫০০ বছরের পুরোনো এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মমি আছে যার সব দাঁত এখনও বর্তমান৷ এখান থেকে নাকো ভিলেজ (১২,০০০ ফিট)৷ নাকোর অন্যতম আকর্ষন নাকো লেক৷ পুরোটাই উইলো পপলার গাছে ছায়া৷ আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে হ্রদের জলে পাহাড়-আকাশের ছায়া মুগ্ধ করে৷ নাকো থেকে বেড়িয়ে খাব, পুহ হয়ে কল্পার পথে৷ এই খাবেই স্পিতি ও শতদ্রু মিলিত হয়ে পরে বাসপা নদীতে মিশেছে৷ পথেই পরে জেলা সদর রিকংপিও৷

কিন্নৌর উপত্যকার সুন্দর গ্রাম এই কল্পা৷ আপেল বাগনে ভর্ত্তি৷ পূর্বদিকে হিমালয়ের পর্বতমলা দৃশ্যমান৷ এখান থেকেই দেখা যায় কিন্নৌর কৈলাশের শৃঙ্গ৷ স্হানীয়রা সকালে কৈলাশকে প্রনাম করে তাদের দিন শুরু করে৷ কল্পা থেকে সলে বেড়িয়ে সাংলা, রকছাম হয়ে ছিটকুল৷ বাসপা নদীর কোল ঘেষে ভারত চীন সীমান্তের শেষ গ্রাম৷ গ্রামের পাশ দিয়ে কুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে বাসপা নদী৷ এই পথেই কোন এক সময় ভারত-তীব্বত ব্যবসার রা্স্তা ছিল৷ ছিটুকুল থেকে সারাহান-রামপুর হয়ে শিমলা৷ সারাহানে আছে ভীমাকালি মন্দির৷ কাঠের তৈরী এই মন্দিরের কারুকার্য দেখার মত৷ একান্ন পীঠের একপীঠ এই ভীমাকালি। শিমলা থেকে কালকা হয়ে ফিরে যাওয়া কলকাতা৷

লেখাঃ Asimkumar Kanjilal | সূত্রঃ AdarBepari