নরপিশাচ

4405
0

আমায় ছোঁবে না মাসুদ। গা কেমন ঘিনঘিন করে।
.
টানা তিন রাত্রি শেষে অবনী যখন কথা বললো তখন তার প্রথম কথা ছিল এটা। আমি নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অবনী আমার ভালবাসা। যাকে বুকে নিয়ে আমি রাতের পর রাত সুখ দুঃখের গল্প করেছি, একসাথে চাঁদ দেখেছি সে আজ আমায় বলছে আমার স্পর্শে তার গা ঘিনঘিন করছে।
.
আমি অবনীর দিকে অপলক তাকিয়ে আছি কিন্তু তাতে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তার দৃষ্টি সামনের দেয়ালের দিকে স্থির হয়ে আছে। পলকও ফেলছে না। আমার শাশুড়ি আম্মা তার মেয়ের এমন অবস্থা দেখে শুধু কাঁদছেন আর প্রলাপ বকছেন। বার বার চেষ্টা করেও যখন তাকে থামাতে পারলাম না তখন এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাকে কেবিন থেকে বের করে দেই।
.
—-এই অবনী কথা বলবে না আমার সাথে?? এভাবে থম মেরে কেন বসে আছো?? কিছু তো বলো।
.
—-আমাদের বাবুটা আর নেই তাই না মাসুদ??
.
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। বুক ঠেলে কান্না আসতে চাইলো। আমি আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। নাহ ওর সামনে আর থাকা যাবে না। এক্ষুণি এখান থেকে বের হওয়া দরকার।
.
—-অবনী তুমি একটু বসো আমি এক্ষুণি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তিন দিন ধরে গোসল করিনি। দ্যাখো গা থেকে কেমন গন্ধ বেরোচ্ছে।
—-ও নেই মাসুদ। এখানটায় ছিল ও। দেখো ও নড়ছে না। ওকে এনে দাওনা মাসুদ। আমার বাবুটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।
.
বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলো অবনী।
.
আমি আর আমার কান্নাটুকু আটকে রাখতে পারলাম না। অবনীকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলাম। আমরা আজ সন্তান হারা। যে সন্তান দুনিয়ার আলোটুকু পর্যন্ত দেখেনি। তাকে হারিয়ে আমরা যেন আজ নিঃস্ব প্রায়। অবনী কাঁদছে। অঝরে কাঁদছে। আমি থামাচ্ছিনা। কাঁদুক। শুনেছি কাঁদলে নাকি মন হালকা হয়। যদি তাই হয় তাহলে কাঁদুক না একটু দোষ কি।
.
অবনীকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করলো একমাস পর।তার আগে ডাক্তার জানিয়ে দিলো নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে একবার চেকাপে নিয়ে যেতে হবে।
.
বাড়িতে ফেরার পর থেকে আমি অবনীকে একবারও চোখের আড়াল করিনি। এখন আর আমি অবনীকে ঠিক চিনতে পারি না। আমার সেই চিরচেনা অবনী যেন এক অপিরিচিতা নারী। আমার অবনী এখন আর হাসে না, কথা বলে না, আমার বুকে মাথা রাখে না, মাঝরাতে আমায় জাগিয়ে আইসক্রিম খাওয়ার বায়না করে না। সব শেষ হয়ে গেছে। একটা ঝড় আমার জীবন থেকে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন কে কেড়ে নিয়েছে। অবনী যেন থেকেও নেই।
.
এরপর শুরু হলো এক নতুন ঝামেলা। প্রায় রোজ রাতেই অবনী ঘুম থেকে জেগে বসে প্রলাপ বকে। আমার কাছে কাকুতি মিনতি করে যেন আমি আমাদের বাচ্চাটাকে এনে দেই। ওকে আমি কি করে বোঝাই এটা যদি আমার হাতে থাকতো তবে কি আর আমি আমার পাগলীটাকে এভাবে কষ্ট পেতে দিতাম।
.
দিন দিন অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। মাঝে মঝে অবনী অজ্ঞান হয়ে যায় আর জ্ঞান ফিরতে কখনো কখনো অর্ধেক দিনও কেটে যায়। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করলে তিনি আমাকে অবনীকে নিয়ে একজন ভালো সাইকোলজিস্টের কাছে যেতে বলেন।
.
সাইকোলজিস্ট মহাশয়ার ব্যবহার অতি বিনয়ী। তিনি অবনীর সাথে কথা বললেন অনেকক্ষণ। ঐ এক্সিডেন্টের পর এই প্রথম আমি অবনীকে মন খুলে কথা বলতে দেখলাম। আমি যেন আবার নতুন করে আলোর দিশা পেলাম। সাইকোলজিস্ট অবনীকে অন্য রুমে পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে ডাকলেন। সবটা জানতে চাইলেন প্রথম থেকে। আমি অবনীকে কবে থেকে চিনি, আমাদের বিয়ে কিভাবে আর অবনীর এই অবস্থার কারণ সব জানতে চাইলেন। আমি বলতে শুরু করলাম।
.
—-অবনী আমার ছোট ফুফুর একমাত্র মেয়ে। তার সাথে আগে বার কয়েক দেখা হলেও তার জন্য ওভাবে কখনো কিছু ফিল করিনি। ওর প্রতি টান অনুভব করলাম ছোট চাচার বিয়েতে। তখন ও সদ্য দশম শ্রেণীতে উঠেছে। আর আমি অনার্স ফাইনাল ইয়ার। চাচার বিয়েতে সবথেকে লেট গেস্ট ছিলেন আমার ছোট ফুফুর পরিবার। আমরা তখন সব কাজিনরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ এক মেয়ে কণ্ঠের আওয়াজ পেলাম।
.
—-কেমন আছো মাসুদ ভাই??
.
আমি তো তাকে দেখেই থ। লম্বা বিনুনি। চোখে গাড় কাজল। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। সেদিন ও সাদা আর মেরুন কালারের একটা সালোয়ার কামিজ পরে ছিল। ওকে যে কি অপূর্ব লাগছিল তা বোঝাতে পারবো না। প্রথমটায় আমি ওকে চিনতেই পারছিলাম না। পরে যখন নাম বললো তখন বুঝলাম এটা সেই ছোট্ট অবনী। ওর সব কিছু আমায় মুগ্ধ করতো। ওর কথা বলা, ওর হাসি, ওর পাগলামি সব। যে কদিন ও ছিল প্রত্যেকদিন ওকে নিয়ে ঘুরতে বের হতাম।চাচার বিয়ে শেষ হলে ওরা বাড়িতে ফিরে যায়। এদিকে আমার অবস্থা খুবই খারাপ। দিনরাত্রি শুধু ওর কথা ভাবছি। নানা অজুহাতে ছোট ফুফুকে ফোন দিতাম। যদি কখনো অবনী ফোনটা রিসিভ করে যদি একবার ওর ভয়েস টা শুনতে পাই এই আশায়। কিন্তু প্রত্যেকবারই আমায় হতাশ হতে হয়। অবশেষে একদিন আমার আশা সফল হয়। অবনী রিসিভ করে ফোন। আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম। তাও কোন রকমে বললাম,
—–হ্যা…হ্যা…লো।
—–মাসুদ ভাই।
.
এরপর দুজনেই নিরব ছিলাম। কেউ কোন কথা বলছি না। কিন্তু মনে হাজার টা কথা জমে আছে। আমি বলতে পারছি না। কিছুক্ষণ পর টের পেলাম অবনী কাঁদছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
.
—-ভালবাসিস আমায়??
—-খুউউউউব।
.
ও কিন্তু উত্তর দিতে এক সেকেন্ডও দেরি করেনি। সেই থেকে শুরু হলো আমাদের ভালবাসা। চুটিয়ে প্রেম করছিলাম দুজন। অপেক্ষা ছিল শুধু একটা চাকরির। তাও পেয়ে গেলাম। সাংবাদিক হয়ে গেলাম আমি। বাসায় জানালাম অবনীর কথা। কেউ কোন আপত্তি করলো না। তখন অবনী এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়েছে। বেশ ধুমধাম করেই বিয়েটা হয়ে গেলো আমাদের।
.
এরমধ্যে আমাদের বাসর টা হলো একদম এপিক। সে রাতে ওকে শুধু মজা করে বলেছিলাম তোকে দেখতে একদম ভূতনীর মতো লাগছে।
.
তারপর ওর সেকি কান্না। কোন মতেই থামাতে পারছি না। শুধু ঠোঁট উল্টিয়ে বাচ্চাদের মতো কেঁদেই যাচ্ছে। শেষে জোর করে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুম পাড়ালাম আর কথা দিলাম আর কখনো ওকে ভূতনী বলবো না।
.
আমাদের বিয়ের পর সময় গুলো ছিলো সবথেকে বেষ্ট মোমেন্ট। একদিন কাজ থেকে বাড়ি ফিরেছি তখন অবনী আমার কানে ফিসফিস করে বললো,
—–মি. মাসুদ আপনি বাবা হতে চলেছেন।
.
খুশিতে সেদিন আমি ওকে কোলে নিয়ে সারা বাড়ি হেঁটেছিলাম। চাকরির সুবাদে ঢাকায় আমাদের আলাদা থাকতে হতো। আমার বাড়ি থেকে যদিও প্রেগনেন্সির খবর পাওয়ার পর অবনীকে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে বলেছিল কিন্তু অবনী রাজি হয় নি। তাই আমার ওর প্রতি দায়িত্বটাও বেড়ে যায়। আমি ওকে যথাসম্ভব সময় দেয়ার চেষ্টা করতাম।
.
অবনীর তখন প্রেগনেন্সির ফোর্টিনথ উইক চলছে। বাড়ির সামনে আসতেই দেখলাম দরজাটা খোলা। এ সময় তো দরজা খোলা থাকার কথা না। আমার বুক টা কোন এক অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলো। দৌড়ে ঘরে গিয়ে দেখলাম ফ্লোরে অবনী পড়ে আছে। রক্তে পুরো ফ্লোর ভিজে গেছে। আমার অবনীর গায়ে একটা সুতোও ছিল না। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে ওর সাথে। আমি একটা শাড়ি নিয়ে কোন রকমে ওকে পেঁচিয়ে হসপিটালে নিয়ে গেলাম। ওর মাথা থেকে তখনো অনবরত রক্ত ঝড়ছে। পৈশাচিক অত্যাচার চালানোর পর ওর মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ডাক্তার জানালেন আমাদের বাবুটা আর নেই। আর এও জানালেন অবনী আর কোন দিন মা হতে পারবে না।
.
মাথায় আঘাত পাওয়ার ফলে অবনী কোমায় চলে যায়। ডাক্তার জানালেন এরকম কেসে পেশেন্টের নরমাল হবার চান্স খুব কম। আমি তখন দিন রাত্রি আল্লাহ কে ডাকছি। টানা তিন রাত্রি পর অবনী ঠিক হলো। ওর জ্ঞান ফিরলো কিন্তু আমি আর আমার আগের অবনীকে পেলাম না। এ যেন এক অন্য অবনী। সে আর আগের মতো নেই ডক্টর। আমি আমার অবনীকে ফেরত চাই আমার আগের অবনীকে ফেরত চাই। প্লিজ ডু সামথিং।
.
সাইকোলজিস্ট মহাশয়ার চোখ থেকে তখন অনবরত জল ঝড়ছে। তিনি আমায় কিছু মেডিসিন দিলেন অবনীকে দেয়ার জন্য। আর আমায় সাজেস্ট করলেন আমরা যেন পারলে একটা বাচ্চা দত্তক নেই। মানসিক আঘাতের ফলে অবনী এমন হয়ে গেছে। ওকে এসব ভোলানো খুব দরকার।
.
বাড়ি ফেরার পর আমি যখন আরামকেদারায় বসে ঝিমোচ্ছিলাম তখনি হুট করে আমার মাথায় একটা চিন্তা এলো। আমার অবনীর সাথে যারা এমন পশুর মতো আচরণ করলো তারা কারা?? ডাক্তার বলেছিলেন একজনের কাজ নয় এটা। ওর উপর ক্রমাগত যৌন অত্যাচার চালানো হয়েছে। সত্যিই তো এই কথাটা তো আমার মাথাতেই আসেনি। এমনকি অবনীও আমায় কিছু বলেনি। আমার স্পষ্ট মনে আছে অবনীর জন্য যখন আমি শাড়ি নিতে বেডরুমে এসেছিলাম তখন ঘরের সব জিনিশ এলোমেলো ছিল। এবার আমার সন্দেহ হলো আমি দৌড়ে গিয়ে আমার ফাইল চেক করলাম। আমার সন্দেহই ঠিক। ডকুমেন্ট গুলো নেই। কদিন আগেই আমাদের এক মন্ত্রীর ছেলে আর তার বন্ধুদের নারী পাচার, ড্রাগ ব্যবসাসহ আরো অনেক কুকর্মের খবর পেয়েছিলাম। তারই ডকুমেন্ট ছিল ফাইলে আর ছিল ওদের বিরুদ্ধে শক্ত কিছু প্রমাণ। তবে কি ওরা আমার ব্যাপারে জেনে গেছিল। ওরাই কি আমার অবনীর সাথে,,,,, নাহ আর ভাবতে পারছি না। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। আমি এবার অবনীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ঠিক করলাম এবার আমার সবটা জানতেই হবে।
.
—-সেদিন কি হয়েছিল অবনী??
.
আমার প্রশ্ন শুনে অবনী আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। একসময় অবনী কেঁদে দিলো। আমি ওর হাতদুটো শক্ত করে ধরলাম ওকে শান্ত করার জন্য।
.
—-প্লিজ অবনী বলো সেদিন কি হয়েছিল। কারা ছিল ওরা?? তুমি কি ওদের চিনো?
.
অবনী কাঁদতে কাঁদতেই উত্তর দিলো।
.
—-আমি ওদের চিনি না মাসুদ। সেদিন কলিং বেল বাজতেই আমি দরজা খুলে দিয়েছিলাম। ভেবেছি তুমি এসেছো। দরজা খুলতেই চারজন লোক হুরমুরিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো। তিন জন আমায় চেপে ধরলো আর বাকি একজন সোজা আমাদের বেডরুমে চলে গেলো। ওদের তিন জনের লোলুপ দৃষ্টি বলে দিচ্ছিল ওরা কি চায়। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই একজন আমার পরনের ম্যাক্সি টা ছিঁড়ে ফেললো। আমি ওদের কাছে অনেক অনুনয় করেছিলাম এমন না করতে। ওদের বলেছিলাম আমি প্রেগন্যান্ট। ওরা আমার কথা শুনলো না মাসুদ ভাই। অসহ্য যন্ত্রণায় আমি মরার মতো পড়ে ছিলাম। যাবার আগে ফুলদানি টা দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করলো তারপর আর কিছু মনে নেই। আমি ঐ নরপিশাচ গুলোর শাস্তি চাই মাসুদ। ওরা খুনি ওরা আমাদের বাচ্চাটাকে মেরে ফেলেছে।
.
আমি নির্বাক হয়ে গেছিলাম। পুরুষ মানুষের নাকি কাঁদতে মানা। পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন কাঁদলে চলবে না। কিন্তু এই মুহুর্তে আমার পক্ষে এই বানী মেনে চলা সম্ভব হলো না। ভিতরে ভিতরে নিজেকেই দোষারোপ করছিলাম। ওরা আমার জন্যই এ বাড়িতে এসেছিল। অবনীর এই অবস্থার জন্য কোথাও না কোথাও আমিই দায়ী। কিন্তু অবনীর শেষের কথাটা হঠাৎই যেন কানে বেজে উঠলো। অবনী ঐ নরপিশাচ দের শাস্তি চায়।
.
মনে মনে তখনি একটা ছক কষে নিলাম। পরের দিন ঠান্ডা মাথায় বাসা থেকে বের হলাম। প্রথমেই এক পরিচিত ভাইকে দিয়ে এসিড আনালাম। এরপর গ্লাভস, ক্লোরোফরম আরো কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনলাম। সারাটা দিন রাস্তাতেই ঘোরাঘুরি করলাম। রাত দশটা বাজতেই গন্তব্যে রওনা দিলাম। যেহেতু ওদের সম্পর্কে আগে থেকেই সব ডিটেইলস নিয়ে ছিলাম তাই আমি জানি এখন ওরা কোথায় থাকতে পারে। একটা গোডাউনে বসে জুয়া খেলছিল ওরা। চারজনই নেশায় বুদ হয়ে আছে। হঠাৎ মদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ওদের মধ্যে একজন ড্রাইভারকে ডাকলো মদের বোতল গাড়ি থেকে বের করার জন্য। আমি খুব সাবধানে গিয়ে ড্রাইভারকে ক্লোরোফরম দিয়ে অজ্ঞান করে দিলাম। তারপর মদের বোতলে এসিড মিশিয়ে দিলাম। আমি জানি ড্রাইভারের আসতে দেরি হচ্ছে দেখলে ওরা নিজেরাই আসবে। হলোও তাই। ওদের মধ্যে একজন এসে মদ নিয়ে গেল সাথে ড্রাইভারকে জাগিয়ে গালি গালাজ করে গেল। বেচারা ড্রাইভার। ওদের শেষ পরিণতি দেখার লোভটা আমি সামলাতে পারছিলাম না। তাই চুপিচুপি সবটা লক্ষ্য করতে লাগলাম। আমি চাইছিলাম ওরা সবাই একসাথেই মদ খাক। কিছুক্ষণ পর চারজন যেই না চিয়ার্স বলে গলায় মদ ঢেলেছে অমনি কেল্লাফতে। জিভ খসে পড়েছে একেকটার। আর বাঁচার কোন চান্স নেই। আমি বাড়িতে ফিরলাম ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে। পরেরদিন সকালে নিউজে হেডলাইন হলো অমুক মন্ত্রীর ছেলে ও তার তিন বন্ধুর রহস্যজনক মৃত্যু। সেদিন অবনীর চোখে তৃপ্তি ছিল। ওর চোখ বলে দিচ্ছিল ও মনে প্রাণে এটাই আশা করছিল।
.
ও উল্লাসিত কণ্ঠে বললো,
—-যাক নরপিশাচ গুলোর শাস্তি হয়েছে তবে।
.
তারপর ও আমার দিকে তাকিয়ে এক রহস্যজনক হাসি দিয়েছিল। আচ্ছা ও কি বুঝে গিয়েছে এটা আমারই কাজ। নাহ এ কথা জিজ্ঞেস করার সাহস আমার নেই।
.
পরিশিষ্ট ::: দশ বছর পরের কথা।
অবনী এখন পুরোপুরি সুস্থ। আমি আর অবনী একটা মেয়ে দত্তক নিয়েছি। ওর নাম রেখেছি মৌ। মৌ এর বয়স এখন ১৪ বছর। সে অসম্ভব বুদ্ধিমতী আর মেধাবী। মাঝে মাঝে মা মেয়ে দুজনই আমায় মাঝরাতে জাগিয়ে আইসক্রিম খাওয়ার বায়না করে। মৌ যেন অবনীরই কার্বনকপি। আমি তো মাঝেমাঝে নিজেই কনফিউজড হয়ে যাই জন্ম না দিয়েও অবনীর সাথে মৌ এর এতো মিল কি করে।
সেই চার খুনের কেসটা এখনো মিস্ট্রি। তবে অবনী আমায় মাঝেমাঝেই একটা কথা বলে,
—–মাসুদ তুমি আমায় নতুন জীবন দিয়েছ।
.
যার অর্থ জানতে চাইলে উত্তরে সে শুধু হাসে সেই রহস্যময় হাসি।

লেখাঃ Oishi_Bonik