জননী

4028
0

পাশে সুন্দরী স্ত্রী নিয়ে জ্যামের মধ্যে গাড়িতে বসে আছি। আশেপাশে থেকে মানুষজন বারবার স্ত্রীর দিকে তাকাচ্ছে বলে মাথা গরম হয়ে উঠছিল।
এরমধ্যে হঠাৎ একটা হিজড়া এসে আমার স্ত্রীর পাশের জানলায় বারবার টোকা দিতে লাগলো।

মাথা আরো গরম হয়ে উঠলো। গ্লাস নিচে নামাতে বারণ করলাম স্ত্রীকে। মনে হয় হিজড়া আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে গাড়ীর পিছনে বসা আমার মায়ের জানালায় টোকা দেওয়া শুরু করলো। এমনিতেই জ্যামের মধ্যে আধঘণ্টা ধরে বসে আছি। তারপর আশেপাশের বাস থেকে মানুষজন বারবার আমার স্ত্রীর দিকে তাকাচ্ছে। সেই সাথে তীব্র গরমে মেজাজ ১২০ ডিগ্রীতে উঠে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে লাগলাম। কিন্তু আশেপাশে মানুষজন হিজড়াটা আমার গাড়ীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকায় আরো কৌতূহল হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

হিজড়াটা পিছনের সীটের জানালায় তখনো টোকা দিয়ে যাচ্ছে। জ্যামও ছাড়ছে না। হঠাৎ দেখলাম আরেকটা হিজড়া এলো। সেও আগের হিজড়াটার সাথে তাল মিলিয়ে বারবার জানালায় টোকা দিতে লাগলো। তারপর আরেকজন হিজড়া এগিয়ে এলো। এভাবে প্রায় সাত -আটজন হিজড়া লাগাতার দুপাশের গাড়ীর জানালা টোকা দেওয়া শুরু করলো। এবার আমার মনের মধ্যে ভয় লাগা শুরু হলো। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম যেন তাড়াতাড়ি জ্যাম ছেড়ে দেয়। কিন্তু জ্যাম ছাড়ার কোনো লক্ষণ নেই।

হঠাৎ পিছন থেকে মা গাড়ীর জানালা খুলে দিয়ে ওদের বলল ” কিছু বলবে তোমরা”? দেখলাম ওদের মধ্যে থেকে একজন এগিয়ে এলো। তারপর জানলার কাছে মুখ দিয়ে মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,” আপনাকে বিশ্ব মা দিবসের শুভেচ্ছা”।
তারপর আরেকজন এগিয়ে এসে একমুঠো গোলাপ মার হাতে তুলে দিয়ে চলে গেলো।

লজ্জায় চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে এলো আমার। আজ বিশ্ব মা দিবস সেটা জানি। অফিসের বসের মায়ের জন্মদিন গিয়েছিলাম। বসের মা কেও “মা” দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। কিন্তু গাড়ীর পিছনে করে মাকে বসের মায়ের জন্মদিন পার্টিতে নিয়ে গেলাম-আসলাম। অথচ মাকে একবারও “মা” দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে পারিনি।

হঠাৎ মা পিছন থেকে বলে উঠলো….

“সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি।”

লেখাঃ রিফাত আহমেদ