গল্প কনেভাগ্য

4533
0

কনে দেখার সাথে সাথে ফরহাদ বেহুশ হয়ে পড়ে গেল! কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারল না, সবাই হতভম্ব হয়ে গেল তাৎক্ষনিক। কনের বাড়িতে হৈচৈ পড়ে গেল। উভয় পক্ষের লোকজন বেশ বিচলিত অসুস্থ ফরহাদকে নিয়ে। এদিকে পাত্রী পক্ষের লোকজন বলাবলি করতে লাগল, পাত্র মৃগী রোগে আক্রান্ত, সুতরাং এখানে সম্বন্ধ সম্ভব না।
.
ফরহাদ প্রবাস থেকে দীর্ঘ প্রায় পনের বছর পর দেশে এল। তার পরিবারের সদস্যরা তোড়জোড় শুরু করল তাকে বিয়ে করানোর জন্য। এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর রেজাল্টের প্রকাশর আগেই সৌদি প্রবাসী পিতা বগলদাবা করে ফরহাদকে সাথে নিয়ে গিয়েছিল। তার কয়েক বছর পর আকস্মিক সড়ক দূর্ঘটনায় ফরহাদের পিতার মৃত্যু হয় প্রবাসেই। কাগজপত্র সংক্রান্ত নানান জটিলতায় একাধিকবার দেশে আসতে চাইলেও পারেনি ফরহাদ। এবার দীর্ঘদিন পর দেশে আসছে দেখে মা বোনরা পাত্রী দেখা শুরু করেছে ফরহাদ দেশে পৌছার আগেই। বেশ কয়েকটা পাত্রীর খোঁজখবর নিয়ে রেখেছিল। সে সূত্রে আজকের কনে দেখা।
.
স্কুল জীবনে ছেলেদের চাইতে মেয়েরা বেশি খাতির করতে চাইতো ফরহাদের সাথে। বন্ধুরা এ জন্য ঈর্ষার চোখে দেখতো ফরহাদকে৷ অবশ্য সে দেখতে বেশ সুদর্শনও ছিল বটে। বন্ধুরা কেউ কেউ তাকে কন্যারাশির জাতক বলত। কলেজে উঠার পর ঘটল নতুন ঘটনা, যেটা স্কুল জীবনে ঘটেনি। ছালেহা খাতুন নামের এক মেয়ে একদিন একটি নাতিদীর্ঘ চিঠি দিয়ে বসল ফরহাদকে। ফরহাদ বন্ধুদের সামনে চিঠিটা খুলে কয়েকলাইন পড়েই বেহুশ হয়ে পড়ে গেল। পুরো কলেজে হৈচৈ পড়ে গেল। ছালেহা লজ্জায় আর কলেজে আসেনি পরদিন থেকে। এ ঘটনা নিয়ে ফরহাদের বন্ধুরা বেশ হাঁসাহাঁসি করতো। পুরো কলেজে ফরহাদের নাম হয়ে গেল কনেভাগ্য।
.
আজকে যে পাত্রী দেখেতে গেছে তার বিস্তারিত তথ্যসমৃদ্ধ বায়োডাটা ও ছবি পূর্বেই ফরহাদের হস্তগত হয়েছে। হালকা গড়নের সুদর্শন সালমা নামের পাত্রীটি নবম শ্রেনীতে পড়ে। বয়স কম হলেও দেখতে বেশ মানানসই হবে এমন অভিমত ঘটকের। হালকা নাস্তার পর কনের বাবা মা কনেকে নিয়ে পাত্র পক্ষের সামনে উপস্থিত হল। নাস্তা পর্ব শেষ হলেও কনে মিষ্টির প্লেট নিয়ে হাজির হল। ঠিক তখনি ঘটল দুর্ঘটনাটি। দ্রুত সিএনজি টেক্সি করে ফরহাদকে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হল।
.
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শুশ্রূষার পর ফরহাদের জ্ঞান ফিরল। সবাই ফরহাদকে জিজ্ঞেস করতে লাগল কি হয়েছে। ফরহাদ কোন প্রতিউত্তর করল না। একটু নিরিবিলি হওয়ার পর বন্ধু নোমানকে বলল পকেট থেকে পাত্রীর বায়োডাটাটি বের করে একটু দেখার জন্য। নোমান ফরহাদের স্কুল জীবনের বন্ধু। কলেজে জীবনেও তারা একসাথে একই কলেজে ছিল। নোমান ফরহাদের পকেট থেকে বায়োডাটাটা বের করে ভাজ খুলে ফরহাদের সামনে ধরল। ফরহাদ নোমানকে বলল, মেয়ের মায়ের নাম দেখো! যদিও প্রায় পনের ষোল বছরের ব্যবধান, আমাকে না চিনলেও আমি কলেজ জীবনে আমাকে চিঠি দেয়া সেই ছালেহা খাতুনকে দেখে চিনতে এতটুকু কষ্ট হয়নি! লেখাঃ মুহাম্মদ ফজলুল হক