ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এথেন্স বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে বাংলা নববর্ষ- ১৪২৬ উদযাপন করা হয়েছে। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দূতাবাস প্রাঙ্গণে বাংলা বর্ষবরণের লক্ষ্যে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাংলাদেশি খাবার উৎসবের সাথে বৈশাখী মেলা আয়োজন করা হয়।
এ উপলক্ষে দূতাবাস প্রাঙ্গণ বৈশাখী আলপনা, বৈশাখী থিমের অলংকরণ, নববর্ষের সাজসজ্জাসহ বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী সাজে সজ্জিত করা হয়। এ বছর গ্রিসে বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম আকর্ষণ ছিল- ‘এক বাংলাদেশি এক গ্রীক’ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের অনুরোধ করা হয় প্রত্যেকে যেন একজন করে গ্রিক বন্ধুকে সাথে নিয়ে আসে। গ্রিসে বাংলা সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেবার উদ্দেশ্যে দূতাবাসের এই আয়োজনে সাড়া দিয়ে প্রবাসীরা গ্রিকদের সাথে নিয়ে আসেন এবং পহেলা বৈশাখের সকালে শত শত বাংলাদেশির এবং গ্রিক নাগরিকদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয় দূতাবাস প্রাঙ্গণ। এথেন্সে এবং নিকটবর্তী শহরসমূহ থেকে আগত শত শত বাংলাদেশি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন ও তার সহধর্মিণী মিসেস শায়লা পারভীন দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বেলা ১২টায় দূতাবাস প্রাঙ্গণে গ্রিক নাগরিক এবং বাংলাদেশিদের সাথে নিয়ে বর্ষবরণ মেলার উদ্বোধন করেন। পরে বাংলাদেশি নাগরিকগণ মিলিতভাবে ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি পরিবেশন করেন। তাদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বৈশাখকে স্মরণ করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, তার সহধর্মিণী, দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং দূতাবাস পরিবারের সদস্যরা।
এ সময় বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ গ্রিসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী এবং জেলা ও বিভাগ ভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর ‘বৈশাখী স্বাক্ষর লিপি’ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। এই স্বাক্ষর লিপিতে বর্ষবরণ সম্পর্কে মনের ভাব প্রকাশ করে গ্রিক এবং বাংলাদেশি নাগরিকরা। বৈশাখ উপলক্ষে দূতাবাসে নির্মাণ করা হয় ‘গ্রিস বাংলা বৈশাখী বায়স্কোপ’ এবং বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পালকি’। বাংলাদেশি পরিবার, নারী-পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী, সর্বস্তরের বাংলাদেশি এবং দূতাবাসের সদস্যগণ মেলাতে অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় বাংলাদেশি নারী-পুরুষ ও শিশুরা লোকজ ও বৈশাখী পোষাকে সজ্জিত ছিলেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১২টিঁ স্টলে বাংলাদেশি খাবার, তৈজসপত্র, শাড়ি, মনোহরী দ্রব্য, অলংকার সামগ্রী এবং আলপনা সহকারে বাংলাদেশকে ফুটিয়ে তোলেন। একটি কর্নারে বাংলাদেশি প্রথাগত চা-স্টলের আদলে ‘এথেন্স টি স্টল’ স্থাপন করা হয়।
বাংলা নববর্ষের এই দিনে দূতাবাসের রসনা কূটনীতি নামক কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী তিনটি রেস্টুরেন্টকে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়। এবিসি রেস্টুরেন্ট, ঘরের স্বাদ এবং রয়েল স্পাইস রেস্টুরেন্ট দূতাবাসের রসনা কূটনীতি কার্যক্রমে অংশ নিয়ে গ্রিসে বাংলাদেশি খাবার জনপ্রিয়করণে বিশেষ ভূমিকা পালনে করে যাচ্ছে। স্বীকৃতিস্বরূপ তাদেরকে বিশেষ ‘রসনা কূটনীতির অগ্রপ্রথিক’ শীর্ষক পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বর্ষবরণের এই শুভক্ষণে বাংলা সংস্কৃতি ও খাদ্য বিদেশে পরিচিত করানোর জন্য যারা দূতাবাসের সাথে কাজ করছেন তাদের স্বীকৃতি দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। আশাকরি অন্যরাও এই কার্যক্রমে এগিয়ে আসবে এবং বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশি খাবার ছড়িয়ে পড়বে গ্রিসে।’
পুরস্কারপ্রাপ্ত তিন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘রসনা কূটনীতির অংশ হতে পেরে আমরাও আনন্দিত। এই পুরস্কার আমাদের দেশের জন্য কাজ করতে আরো উদ্বুদ্ধ করবে। এছাড়া ওয়েজ অনার্স কল্যাণ বোর্ডে ডেটা বেইজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দূতাবাস কর্তৃক প্রস্তুতকৃত নাটিকারও উদ্বোধন হয় এই আয়োজনে।
রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং দূতাবাসের কাউন্সিলর ড. সৈয়দা ফারহানা নূর চৌধুরীর রচনা ও পরিচালনায় তৈরি এই নাটিকায় দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করেন।
এরপর বৈশাখী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দূতাবাসের সদস্যবৃন্দ, স্থানীয় দোয়েল সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীবৃন্দ এবং শিশু-কিশোররা বৈশাখী ও লোকজ সংগীত, কবিতা, নৃত্য ইত্যাদি পরিবেশন করেন। শত শত নারী-পুরুষের আগমনে কলকাকলিতে মুখরিত হয় দূতাবাস এবং সৃষ্টি হয় এক বর্ণিল মনোরম পরিবেশের। মেলায় আগমনকারীরা বিভিন্ন স্টলে বাংলাদেশি পণ্য দর্শন এবং বাংলাদেশি খাবারও আস্বাদন করেন। বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি, গ্রামীণ বাংলার বৈশাখী আবহে স্টলসহ দূতাবাস প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে এক টুকরো বাংলাদেশ। এরপর আয়োজন করা হয় বৈশাখী মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিপুল উৎসাহে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাদ্যযন্ত্র সহকারে এ শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
এ উপলক্ষে দূতাবাসে একটি র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রদূত ও তাঁর সহধর্মিণী বিজয়ীদের মাঝে আকর্ষণীয় পুরস্কার বিতরণ করেন। প্রবাসী বাংলাদেশি যারা বৈশাখী মেলায় স্টল নির্মাণ করেছেন তাদেরকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানসমূহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বয়ে আনে আনন্দ, বন্ধন, সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতি। বর্ষবরণ উৎসব এবং উন্নয়ন মেলা গ্রীস প্রবাসীদের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে।
প্রবাসে আপনার অভিজ্ঞতা, কমিউনিটির খবর, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, ব্যাবসা, কমিউনিটি বিষয়ক চিন্তা-চেতনা, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংঘঠন, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা – amaderparis@gmail.com