পর্তুগালের প্রাচীন রাজধানী পোর্তোয় নানা আয়োজনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেছে বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তো। বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তো, পর্তুগিজ স্পাসো টি অ্যাসোসিয়েশন ও পর্তুগিজ সরকারের সহযোগিতায় যৌথভাবে এবারের একুশের আয়োজনে ছিল ভিন্ন মাত্রা।
একুশের রাত ৮টায় পোর্তো শহরে নির্মিত স্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ দূতাবাস লিসবনের রাষ্ট্রদূত মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী। এরপর বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তো নেতারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়াও পোর্তো শহরের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
একুশে উদযাপন অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে পোর্তো শহরের বিখ্যাত কলিসেও পোর্তো অ্যাজেয়াস অডিটোরিয়ামে একুশের বিশেষ আলোচনা ও ডিনার অনুষ্ঠিত হয়।
পর্তুগালের সরকারি টিভিতে কর্মরত সাংবাদিক হেলদ্যার রেইসের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এ ছাড়াও বাংলা ভাষায় প্রারম্ভিক উপস্থাপনা করেন তন্নী আলম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের স্মরণ করে এবং পুরনো ঢাকার চকবাজারে দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে আগুনে পুড়ে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
আয়োজক সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্পাসো টি’র সভাপতি জর্জ অলিভেইরা স্বাগত বক্তব্য দেন। শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তোর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম বাংলা ভাষার ইতিহাস ও আন্দোলনের পটভূমি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন।
ভাষা শহীদদের গভীরভাবে স্মরণের মধ্য দিয়ে বক্তব্যে বাংলাদেশ দূতাবাস লিসবনের রাষ্ট্রদূত মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী বাংলা ভাষায় পর্তুগিজ ভাষার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আলোচনা করেন। পর্তুগিজ-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করেন তিনি।
সমাপনী বক্তব্যে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আলোচনা পর্ব শেষ করেন বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তোর সভাপতি শাহ আলম কাজল। মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে পর্তুগালের ৮ জন বিশেষ নাগরিককে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তোর ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পর্তুগিজ স্পাসো টি’র সহযোগিতায় আন্তঃকালচারাল ও মানবাধিকার সম্মাননা (একুশে পদক) ২০১৮ প্রদান করা হয়। পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী এন্তোনিও কস্তা, পোর্তো সিটি মেয়র রুই মোরেইরা, পর্তুগালের ইমিগ্রেশন হাই কমিশনার পেদ্রো কালাদো, পর্তুগালের হয়ে অলিম্পিকে স্বর্ণ পদক জয়ী ক্রীড়াবিদ, পর্তুগালের সরকারি টিভিতে কর্মরত সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, রিফিউজি সংস্থার প্রধান সহ মোট ৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এ ছাড়াও সরকারের মন্ত্রী সহ উচ্চ পর্যায়ের সদস্য সহ বাংলা ভাষার ইতিহাস ও ভাষা আন্দোলনের পটভূমি সম্পর্কে জানতে ইউনিভার্সিটি অব পোর্তোর শিক্ষকদের, শিক্ষার্থী, সরকারি কর্মকর্তা, ২১ দেশের অংশগ্রহণ ছাড়াও পোর্তোর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা, স্থানীয় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্তুগিজ নাগরিক এবারের আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন।
নৈশ্যভোজ শেষে বাংলাদেশী নৃত্য শিল্পী স্বর্ণা শেখের বাংলা গানের সাথে নৃত্য এবং পর্তুগিজ আফ্রিকান শিল্পীদের অংশগ্রহণে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। পরে উপস্থাপক হেলদ্যার রেইস শুভরাত্রি জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
লিখেছেনঃ নাঈম হাসান পাভেল , পর্তুগাল