বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় পর্তুগালেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ বাংলাদেশ দূতাবাস, লিসবন এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। লিসবনের campo martires de patria নামক পার্কে স্থাপিত শহিদ মিনারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পর্তুগালের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনারে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ভাষা শহিদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন পর্তুগালে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মোঃ রুহুল আলম সিদ্দিকী এবং তার সহধর্মিণী। এরপর স্থানীয় সরকার Junta Freguesia de Arroios এর প্রেসিডেন্ট মিজ মার্গারিদা মার্টিন্স এবং পর্তুগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি মিজ ক্লউডিয়া রিবেইরো শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। উল্লেখ্য ২০১৫ সালে পর্তুগালের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপিত হয় রাজধানী লিসবনে।
পর্তুগালে বাংলাদেশ কমিউনিটি এর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, পর্তুগাল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), পর্তুগাল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,পর্তুগাল, পর্তুগাল -বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এসোসিয়েশন, বৃহত্তর নোয়াখালী এসোসিয়েশন ইন পর্তুগাল, বৃহত্তর ফরিদপুর এসোসিয়েশন ইন পর্তুগাল, হবিগঞ্জ এসোসিয়েশন ইন পর্তুগাল এবং হবিগঞ্জ কমিউনিটি ইন পর্তুগাল এর পক্ষ থেকে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে একযোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে দিবসটি।
১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা দেন- ‘ উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ মূলত খাজা নাজিমুদ্দিনের এই ভাষণই ভাষা আন্দোলনের দাবানল সৃষ্টি করে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাঙলার ছাত্র-শিক্ষক-জনতাসহ আপামর মানুষ। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলটি ঢাকার পলাশীর আমতলায় (বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের সড়ক) এলে নির্বিচারে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, সফিউরসহ নাম না জানা আরো অনেকে। এরপর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন। অবশেষে বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই বাঙালি জাতির চরম জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। এর পথ ধরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম নেয় লাল-সবুজের বাংলাদেশ।
লিখেছেনঃ জহুর উল হক, (লিসবন) পর্তুগাল।